বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
ডিসি পদে পদায়ন নিয়ে উত্তেজনা থামছে না। অসন্তোষ রূপ নেয় হট্টগোলে। এরপর এখন চলছে বার বার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে জেলা প্রশাসক পদে যোগদানে বারণ করা হয়েছে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের।
গত সোম ও মঙ্গলবার (৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে যে কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগের কর্মস্থলেই কাজ করে যেতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের মাধ্যমে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়াদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমাদের মেসেজটি (বার্তা) পাওয়া মাত্র সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে কর্মকর্তাদের।
সূত্র জানায়, আজ সকাল ১১টার দিকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নতুন পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের বসার কথা ছিল। কর্মকর্তাদের গাইডলাইন দেওয়ার কথা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। তবে সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের হট্টগোলের কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। এই কারণে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তাদের নতুন কর্মস্থলে (বিভিন্ন জেলায়) যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সবাই যার যার বর্তমান কর্মস্থলে কাজ করবেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করে সরকার। মঙ্গলবার দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরও ৩৫ জনকে ডিসি হিসেবে পদায়নের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে সোমবার সিলেট জেলায় যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, পরদিন মঙ্গলবার তার নিয়োগ বাতিল করে অন্যজনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ফলে মোট ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ পান।
এই সিদ্ধান্তের পরপরই মঙ্গলবার সচিবালয়ে হট্টগোল করেন কিছু কর্মকর্তা। ‘পদায়ন বঞ্চিত’ হয়েছেন দাবি করে তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান। কয়েক ঘণ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। কয়েকটি সূত্র বলছে, বিএনপি ও জামায়াতপন্থি কর্মকর্তারাই এই হট্টগোলে জড়িত।
বিক্ষোভকারী কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নতুন পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই বিগত হাসিনা সরকারের ফিটলিস্টের কর্মকর্তা এবং বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
মঙ্গলার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে আলাপের পর তিনি প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাস দিলে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা। তবে আজ বুধবার সকালে আবার তারা গণ্ডগোল শুরু করেন।
অস্থিরতার মুখে ৮ জনের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার। একইসঙ্গে আরও চার জেলার ডিসি পদে রদবদল করা হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসউর রহমান সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সাধারণত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ফিটলিস্ট হয়, সেই কমিটি আজ বৈঠকে বসেছিল। পর্যালোচনা করে আট জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো– লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, রাজবাড়ী ও সিরাজগঞ্জ।
এসব জেলার মধ্যে লক্ষ্মীপুরে নিয়োগ পেয়েছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী, জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান এবং কুষ্টিয়ায় নিয়োগ পেয়েছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসিচব ফারহানা ইসলাম।
এছাড়াও রাজশাহীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান, শরীয়তপুরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুল আজিজ, দিনাজপুরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আরপিএটিসির উপপরিচালক মনোয়ারা বেগম এবং সিরাজগঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এসব জেলায় নতুন করে যারা নিয়োগ পাবেন, তাদের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া আরও ৪ জেলার ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে বলেও জানান মোখলেসউর রহমান। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসিকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন