শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
৫ নভেম্বর দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত সম্পদকীয় কলামে যেমনটি আভাস দেয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে তা-ই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনাকে ছাপিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে (!) রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ হতবাক শুধু নয়- ট্রাম্পের বিজয়ে মানসিকভাবে আহত হয়েছেন। নিজ দেশের হিলারী সমর্থকরা কাঁন্নায় বুক ভাসাচ্ছে।
এই সেদিন ২০১৪ সালে ধনকুবের ট্রাম্প রিপাবলিকান দলে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক দায়িত্বের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে যাওয়া নিশ্চিত করার পথে হারিয়েছেন সাবেক ফার্স্টলেডি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেলেই চলে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৯০ ভোট। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি পেয়েছেন ২১৮ ভোট।
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেছেন, “আমেরিকাকে আমি সব সময় শীর্ষে রাখব।”
ট্রাম্পের ভোট ২৭০ পেরিয়ে যাওয়ার পর হিলারি তাকে ফোন করে হার স্বীকার করে নেন বলে সিএনএন এর খবর। কেবল হোয়াইট হাউজ নয় এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের দুই কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে রিপাবলিকান পার্টি। নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ আগেই তাদের হাতে ছিল, নতুন করে সিনেটও তাদের দখলে যাচ্ছে।
বিশ্বের সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত কোনদিকে যাবে সে নিয়েও শুরু হয়েছে নানা বিশ্লেষণ। তবে ডোলান্ড ট্রাম্পের বিজয়ে হতবাক হওয়ার খুব বেশি কারণ অনুসন্ধান করার কোনো প্রয়োজন নেই। যা হওয়ার সেটিই হয়েছে। এটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখারও কোনো সুযোগ নেই। আমেরিকার রাজনীতিটা সে দেশের ধনকুবেররা নিয়ন্ত্রণ না করলেও অবিসম্ভাভ্যভাবেই প্রভাবিত করে। তাদের এই প্রভাবের বাইরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এক রকম অসম্ভবই বটে। যুক্তরাষ্টের একজন নারী সে দেশের প্রেসিডেন্ট হবে সে ধরনের মানসিক প্রস্তুতি নীতিনির্ধারকদের মধ্যে গড়ে উঠতে আরো সময় লাগবে। পুঁজির আগ্রাসনই যেখানে মূল কথা, সেখানে হঠাৎ করেই একজন হিলারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে তা হয় নাÑ হয়ওনি। ধনকুবেররা তাদের পুঁজির সুরক্ষার জন্য নারী নেতৃত্বকে আস্থায় নেয়ার মত অবস্থায় নেই। যদিও আমেরিকার মানুষ হিলারীকে নিয়ে আবগাপ্লুত ছিলÑ তাতে কী? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থাকলেও সে দেশের সরকার কিন্তু পক্ষে তো নয়ই, বাংলাদেশে গণহত্যা চালাতে সমর্থন যুগিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের অর্থ মানে জনগণের আকাক্সক্ষার নিরঙ্কুশ প্রতিফলন নয়Ñ সেটি সে দেশের ধনকুবেরদের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে। নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিংটা তেমন করেই হয়Ñ সেটি ডেমক্রেটিক প্রার্থী হোক, কিংবা রিপাবলিকান প্রার্থী হোক।
তবে এটা ঠিক যে, ট্রাম্পের মত একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী, অসংলগ্ন চরিত্রের ঔদ্ধত্য ধনকুবেরের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা সে দেশের অধঃপতিত ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত দেয়। আর সেটা হলে বলা যাবে যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে পতনের সূচনা হলো। অবশ্য এর জন্য পৃথিবীর মানুষকে চড়া মূল্যও দিতে হতে পারে। এখন শুধুই অপেক্ষাÑ সময়ই সব বলে দেবে।