ঢাকায় আম নিয়ে ছুটলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বাঘা প্রতিনিধি:


টানা পঞ্চমবারের মতো চালু হয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী হয়েঠে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেনটি। ট্রেনটির নাম ম্যাংগো ও ক্যাটেল স্পেশাল দেওয়া হলেও ১২ তারিখের পর থেকে কোরবানির পশু নিয়ে ছুটবে এই ট্রেন।

এর আগে সোমবার বিকেলে এই ট্রেনের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছমিনা খাতুন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদসহ অনান্যরা।

সোমবার বিকাল ৪টায় রহনপুর স্টেশন থেকে ১০২০ কেজি আম নিয়ে যাত্রা শুরু করে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এরপর নাচোল, আমনুরা জংশন হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনে আরো ৭৮৫ কেজি উঠানো হয়। পরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে আম নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজশাহী উদ্দেশ্য ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ জানান, এ ট্রেনে আম ছাড়াও শাকসবজি, ডিমসহ অনান্য কৃষি পণ্য পরিবহন করা যাবে। সোমবার উদ্বোধন করা হলেও আগামী ১২ তারিখ থেকে তিনদিন ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

এদিন রাজশাহী থেকে প্রায় ৫০ ক্যারেটে ১ হাজার কেজি আম পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও আড়ানী স্টেশন থেকে ৮২০ কেজি আম পাঠানো হয়। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটিতে আড়ানী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকায় পৌঁছেেত খরচ পড়ছে ১ টাকা ৪৩ পয়সা। অল্প মূল্যে আম পরিবহনের বিষয়টি সবার মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নিরাপদে আম পরিবহনের জন্য ট্রেনটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আড়ানী খয়েরমিল নুরনগর গ্রামের আম ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, আমার ৩৮০ কেজি আম ১ টাকা ৪৩ পয়সা হিসেবে বুক করেছি। ২৫ কেজি ওজনের ১২টি ক্যারেট বুক করা হয়েছে। এছাড়া ক্যারেট প্রতি ১০ টাকা লেবার খরচ দিয়েছি। ঢাকা স্টেশনে নামাতে লাগবে আরো ১০ টাকা। তবে সড়কের চেয়ে টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
আড়ানী স্টেশেনের কুলির সরদার হোসেন আলী বলেন, এই স্টেশনে ১১ জন কুলি রয়েছি। এই ট্রেনটি চালু হওয়ায় কুলিদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

আড়ানী স্টেশন মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, সড়কের চেয়ে পরিবহন খরচ অনেক কম হচ্ছে। এতে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। আম পরিবহনের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি। আড়ানী থেকে ট্রেনটি ছাড়ছে ৮টা ১৫ মিনিটে। ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, নিরাপদে স্বল্প সময় ও খরচে আম পরিবহনের লক্ষ্যে লোকসান মাথায় নিয়েই এই ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হলো। ট্রেনটিতে ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। যাত্রা পথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গাসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ট্রেনটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯, রাজবাড়ি থেকে ১ টাকা ৭ ও ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা।

ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে নিরাপদে আম পরিবহন করলেও লোকসান গুনছে রেলওয়ে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়া এ স্পেশাল ট্রেন প্রতি বছরই লোকসান গুনছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩ হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৪৭ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি।

এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ৭ দিন। এ সময় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি আম পরিবহনে আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা। সবশেষ গত ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয়েছে ১৮ দিন। এ সময় ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি আম পরিবহনে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

চার বছরে রেল আয় করেছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। এসময়ে রেল পরিচালনা করতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। ফলে আম পরিবহন করে রেল লোকসান গুনেছে ১ কোটি ৯২ হাজার ৮৬০ টাকা। তবে এত পরিমাণ আর্থিক লোকসান সত্ত্বেও সোমবার (১০ জুন) থেকে এই স্পেশাল ট্রেন আবারো যাত্রা শুরু করল।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ