ঢাবির হলে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মামলা করবে প্রশাসন

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

এক পর্যায়ে ওই যুবককে হলের ডাইনিংয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়, পরে আবার মারধর করা হয়

সোনার দেশ ডেস্ক :


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এক যুবক। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে বাদী হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তাকে আটক করে ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল। তার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮টা-৯টার দিকে ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে ধরে শিক্ষার্থীরা। আটকের পর রাত ১০টা পর্যন্ত হলের গেস্টরুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর আবারও মারধর করা হয়। দীর্ঘ জেরায় তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে।

এ দিকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরে জানা যায়, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। এ দিকে মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ফজলুল হক হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেছেন তারা।

বিবৃতিতে আবু বাকের মজুমদার বলেন, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ফলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মারধরের ফলে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলির প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৫ বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যে নজির দেখা গেছে, তা আমাদের সমাজের বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের গুরুতর অভাবকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জরুরি ছিল এবং নতুন বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকারের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

ভোর সাড়ে ৪টায় প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যান। সেখান থেকে পরে হল প্রাঙ্গনে এসে হলের বিভিন্ন এরিয়ায় ঘুরে দেখেন। হলের পুরান ভবনের গেস্টরুম ও এক্সেসটেনশনের গেস্টরুম, যেখানে ভুক্তভুগীকে মারা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে দুটি রুম সিলগালা করে দেয়।

পরে হল প্রাধ্যক্ষের অফিসে প্রভোস্ট শাহ মো. মাসুমসহ হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর জানান, প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ মামলা দায়ের করবে। আজকের মধ্যেই হল প্রশাসন সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে প্রক্টর অফিসে প্রতিবেদন দেবে।

সেই প্রতিবেদনের আলোকে আজকের মধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ডিসিপ্লিনারি মিটিং ও সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ