সোনার দেশ ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত দুজনের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও অপরজন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গেছে। বুধবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দুই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এরই মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। তবে ঢাবির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
দুই হত্যা যেভাবে
বুধবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে দেখতে পান কয়েক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কয়েক দফা পিটিয়ে প্রক্টর অফিসে নেওয়া হয়। সেখানেও কয়েক দফা মারধরের শিকার হন শামীম। পরে তাকে আশুলিয়া পুলিশের হাতে তুলে দিলে গুরুতর আহত অবস্থায় গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শামীম।
বুধবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েক শিক্ষার্থী। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা মরদেহ রেখেই সরে যান।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। কেউ চুরি করতে আসলেও তাঁকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারো নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হলের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ
ঢাবি ও জাবির ঘটনা দুটি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁরা তো (শিক্ষার্থী) সবচেয়ে শিক্ষিত। একজন অপরাধ করলে তাঁকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন। আইন তো নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার নেই কারো।’
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিবাদ মিছিল
এদিকে, বুধবারের এই ঘটনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ শেষে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নানা স্লোগান দেন। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।
ঢাবিতে বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি
মব জাস্টিসের নামে হত্যা বন্ধ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যানারসহ সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, ড. আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক ড. এম এম তৌহিদুল ইসলাম এবং সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) এ. কে. এম. নূর আলম সিদ্দিকী।
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, হল প্রশাসনের আবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সকাল পর্যন্ত তদন্তের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময় দেওয়া হয়েছে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত।
ঢাবির পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সোয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ওই শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
গ্রেফতার পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া (২৫), মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২১), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন ও জিওগ্রাফির আল হোসেন সাজ্জাদ। এছাড়া সর্বশেষ গ্রেফতার শিক্ষার্থীর নাম আহসান উল্লাহ (২৪)। তিনি গণিত বিভাগের ছাত্র।
জাবির সমন্বয়ককে অব্যাহতি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অংশগ্রহণের অভিযোগে আহসান লাবিবকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অব্যাহতি বহাল থাকবে। একই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়।
শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সাভারের আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এ ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
তোফাজ্জল হত্যায় যা জানালো পুলিশ
বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, নিহতের সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশের কাছে পাঁচজনকে হস্তান্তর করেছে। তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
কারা ঘটনা ঘটলো এবং ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সন্দেহজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই যুবককে ফজলুল হক মুসলিম হলের গেস্ট রুমে নিয়ে মারধর করা হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত পৌনে ১টার দিকে ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তদন্তাধীন বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশকেও দায়ী করছে। এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য কী? জানতে চাইলে ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, কারা ঘটিয়েছে এবং কী কারণে ঘটিয়েছে সেটি তদন্তের বিষয়। আশা করি তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে ডিবির টিমও কাজ করছে।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টায় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুসি মারেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্টাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
যেভাবে মারা হলো শামীমকে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে কারও জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শামীম; হঠাৎ পেছন থেকে তিনজন এসে তাকে জাপটে ধরে মারধর শুরু করেন। এরপর আরও চার দফায় বেধড়ক মারধরের পর তাকে দেওয়া হয় পুলিশে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। এরপর পুলিশ শামীমকে হাসপাতালে নিলে রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মোল্লা শামীম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই থাকতেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তাকে পেটানো হয়। তার বিরুদ্ধে জমি দখলে সহায়তা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
ঘটনার বর্ণনায় দুজন শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে মহাসড়কের পাশে এক স্বজনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন ছিলেন শামীম। তাকে দেখতে পেয়ে তিন শিক্ষার্থী ধরতে যান। একজন তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলেন। সেখানে এক দফা তাকে মারধর করা হয়।
এরপর প্রান্তিক গেইটের ভেতরে যেখানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে কাপড় বিক্রি হয়, সেখানে নিয়ে শামীমকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এরপর তাকে জয় বাংলা গেইটে নিয়ে আরেকবার মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
তারা শামীমকে প্রক্টর অফিসের পাশের একটি কক্ষে রাখেন। সেখানেও তাকে আরও দুই দফা মারধর করা হয়। দুই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, খবর শুনে পুলিশ আগেই এসেছিল, তবে প্রক্টর অফিসের ওই কক্ষে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শামীমকে পুলিশে হস্তান্তর করা হলে তাকে ‘হাঁটিয়ে নিয়ে’ গাড়িতে তোলে পুলিশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রশিদুল আলমও বলছেন, শামীম ‘হেঁটে-হেঁটেই’ পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু এরপর তার মৃত্যুর বিষয়টি ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে দেখছেন প্রক্টর। তবে পুলিশ বলছে, তাকে উদ্ধারের পরপরই তারা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু চিকিৎসক শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রক্টর রশিদুল আলম বলেন, ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে।
“তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পুলিশে হস্তান্তরের সময়ও মনে হয়নি তিনি ‘আশংকাজনক’।
তবে ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি আহম্মদ মুইদ বলেন, আমরা তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। হাসপাতালে পাঠানোর পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুলিয়া থানা পুলিশ শামীমকে পাঠিয়েছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে।
এ হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সুজন বলেন, রাত সোয়া ৯টার দিকে শামীমকে নিয়ে আসার পর আমরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। দেখে মনে হয়েছে হাসপাতালে আনার কিছু আগেই ওনার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।