ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধর: ‘প্রলয়’ চক্রের বিরুদ্ধে মামলা, আটক ২

আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৩, ২:০০ অপরাহ্ণ

বলা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ বানিয়েছে ‘প্রলয়’ চক্রের সদস্যরা।

সোনার দেশ ডেস্ক :


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যারা ‘প্রলয়’ নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য।
শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ জানান, মামলায় ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ‘প্রলয়’ চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওসি বলেন, ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে ওই মামলা দায়ের করেন। সেখানে জোবায়েরকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
“গত রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

মামলায় যাদের নাম আছে, তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া, সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ; সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব; মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান; কবি জসীমউদ্দীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন; জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ; জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী।

শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের সামনে স্যার এফ রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের পর ‘প্রলয় চক্রের’ এই সদস্যদের নাম সামনে আসে।
তাদের বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এই চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলায় তাদের একটি ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।”

তবে কোন দুজনকে আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে বলে জানান প্রক্টর।
মামলার এজহারে বলা হয়, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বিভাগের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করছিলেন জোবায়ের। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়াভাবে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় তাদের গায়ে কাদার ছিটা লাগে।

এ সময় গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল।
সাদিয়া আফরোজ খান অভিযোগে লিখেছেন, “আমার ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। এরপর আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা একাডেমি পার হওয়ার পর তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে। চালককে জিজ্ঞেস করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। পরে গাড়ি থেকে পাঁচজন ছেলে বের হয়। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা দেখে যে তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র।

“পরে তাদের একজন কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে বলে। ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কি না, প্রশ্ন করলে অভিযুক্তরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়।”

জোবায়েরের মা বলেন, “কথা-কাটাকাটির পর আমার ছেলে কবি জসীমউদ্দীন হলের দিকে চলে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে আমার ছেলে তার অবস্থান জানায়।

“কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্তরা জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয়। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।”

মারধরের সময় জোবায়েরের বন্ধুরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও এলোপাতাড়ি পেটানোর কথা বলা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জোবায়ের ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়। মারধরে জোবায়ের চেতনা হারিয়ে ফেললে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে জোবায়েরকে তার বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ