মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
তানজিমুল হক
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’ নামে একটি হাই-টেক পার্ক। নগরীর রাজপাড়া থানার হড়গ্রাম গুড়িপাড়া সংলগ্ন এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠান। পরবর্তীতে ২০১১ সালে নগরীর মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেই প্রত্যাশার যাত্রা শুরু হলো। এখন বাস্তবায়নের পথে সাবেক মেয়র লিটনের স্বপ্ন। পাশাপাশি এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তথ্য প্রযুক্তর ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে রাজশাহীর চিত্র।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে অচিরেই এর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হবে। শেষ হবে আগামি তিন বছরের মধ্যে।
তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানিয়েছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র থাকা অবস্থায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে একটি সিলিকন সিটি নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীতে এক জনসভায় এটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ২২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপরই এর নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির ভেতর ১০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৬২ হাজার বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি আইটি ইনকুবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। এর কার্যক্রম শুরু হলে তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে রাজশাহী। ফেসবুক, গুগল, ইয়াহুর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে গড়ে ওঠার মতো ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। রাজশাহীর আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রাখবে দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পটি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী হলো শিক্ষানগরী। বহু সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তাদের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম। আর এ জন্যই তিনি মেয়র থাকাকালে রাজশাহীতে সিলিকন সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। এখন এর বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু চাকরি আর শ্রম বিক্রি করে রাজশাহীর মানুষের জীবন চলবে না। বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির মধ্য দিয়ে এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি করা সম্ভব যখন, শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা আর চাকরি খুঁজবে না। বিশ্বের নামি-দামি আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোই তাদের খুঁজবে। রাজশাহী থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। আইটি বিশ্বে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. সমলাল দাস মনে করেন, রাজশাহীতে এই হাই-টেক পার্কের কার্যক্রম শুরু হলে উত্তরাঞ্চলে মেধাভিত্তিক শ্রমের পরিমাণ বাড়বে। তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর জনশক্তিও বাড়বে। ফলে অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাবে রাজশাহী।