তানোরে আলু খেতে রাইজোকটনিয়া রোগ || ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে চাষিরা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

লুৎফর রহমান, তানোর


রাজশাহীর তানোরে আলু খেতে রাইজোকটনিয়া (ডংকার) রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর সেই আক্রান্ত আলুর পরিপক্কতা না হতেই চাষিরা তুলে ফেলছে। এর ফলে আলুর ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অপরদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আলু খেতে পচন রোগও দেখা যাচ্ছে। ফলে আলু চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সরনজাই ও পাঁচন্দর  ইউপি এলাকা জুড়ে সর্বত্রই আলু খেতে এ রাইজোকটনিয়া (ডংকা) রোগ দেখা দিয়েছে। অপরদিকে রাইজোকটনিয়া ডংকা রোগ মোকাবিলা করতে উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে ও সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছে। একই জমিতে বার বার আলু হওয়ার কারণে জৈব সারের অভাবে এই রোগ দেখা দিয়েছে বলে তারা জানান। এ বছর কোন কিছু করার নেই। আলু উত্তোলনের পর আমন ধান রোপণের আগে জমিগুলোতে ধনচার গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। তাহলে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হবে বলে।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গবার সরজমিনে সরনজাই খাঁ পাড়ার আলুর মাঠে গিয়ে কৃষক সোহেল রানার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ২৫ বিঘা জমিতে ডংকার রোগে আক্রান্ত হয়। তাই পরিপক্কতার আগেই আলু তুলে ফেলেছি। সে আলুর ফলন প্রতি বিঘাতে মাত্র ১০ বস্তা করে হয়েছে। আলু বাজারজাত ও স্টোরজাত করতে পারছি না। বাড়িতে রেখে শুধুমাত্র গোখাদ্য হিসাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পরিপক্কতার আগে জমি থেকে তুলছি এ কারণে বোরো ধান রোপণ করবো। তাতে করে কিছুটা হলেও লোকসানের হাত থেকে রক্ষা হবে বলে জনান তিনি।
উপজেলা মোহনপুর থেকে তানোরে আলু চাষবাদ করতে আশা কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি প্রতিকূল অবহাওয়ার কারণে আলু খেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। আর সে জন্য স্থানীয় ডিলাররা নামধারী কোম্পানির নি¤œমানের কীটনাশকে বাজার ছেয়ে গেছে। তিনি কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা কোনো ফল পাচ্ছে না। এতে কৃষকরা অর্থিকভাবে ক্ষতিগস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষিবীদ আবদুল মোমিন জানান, রাইজোকটনিয়া (ডংকার) রোগে আক্রান্তকৃত আলুর গাছের নিজে অংশের মাটির ওপরে আলু ধারে। গাছের গিটে গিটে আলু ধরে। গাছের অনেক শাখা প্রশাখা দেখা দেয়। আলুর টিমারের মতো আকৃতি হয়। আলু পুরো শরীল ফাটা ফাটা আকার ধারণ করে। আর মাটির নিচের আলুগুলো কোন কাজে লাগে না। এমন কি বাজারজাত ও স্টোরজাত করাও যায় না। শুধুমাত্র গোখাদ্য হিসাবে বাজারজাত করা যেতে পারে বলে তিনি বলেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান,একই জমিতে বার বার আলু হওয়ার ফলে, অথবা পানি ব্যবস্থাপন সঠিক না হওয়ার কারণে ও গুণগত মান সম্পূর্ণ বীজ না হলে এ রোগে আলু খেত আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমন ধানের আগে জমিতে ধনচার গাছ লাগাতে হবে। আর সে গাছগুলো বড় হওয়ার পর কেটে জমিতে পানি দিয়ে পচাতে হবে। তাহলে আগামীতে এ রোগ আর দেখা যাবে না বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ