রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
লুৎফর রহমান, তানোর
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পিছিয়ে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে তাদেরকে এ মাছ চাষে সবরকমের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া মাছ চাষ কার্যক্রম দারুন সাফল্য পেয়েছে। ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ে লোকজনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে।
তানোর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ ও গবেষণা প্রকল্পের আওতায় তানোর উপজেলার বাবুল ডাইং আদিবাসীপাড়া, বনকেশর আদিবাসীপাড়া, জোতগোকুল আদিবাসীপাড়া, গুড়ইল আদিবাসীপাড়া এবং শালবাড়ী আদিবাসীপাড়ায় মোট পাঁচটি প্রদর্শনীতে কুচিয়া চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি প্রদর্শনীর প্রথম পর্যায়ের কুচিয়া মাছ বাজারজাত করে সাফল্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের বাবুল ডাইং কুচিয়া চাষ প্রকল্পের সভাপতি শ্রী সুপল হেমরম জানান, তাদের কুচিয়া চাষে উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় যাবতীয় উপকরণ সরকারিভাবে সরবরাহ করেছেন। আমরা ১০টি পরিবারের প্রতি একজন করে মোট ১০ জন শুধু এর দেখাশোনা করে ৭-৯ মাস পর বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা সবাই ভাগ করে নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, প্রথম পর্যায়ে সরকার যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের কিভাবে এর চাষ করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা নিজ উদ্যোগে ওই ছোট পুকুরে আবার কুচিয়ার পোনা সংগ্রহ করে চাষ করবো।
পাঁচন্দর ইউনিয়নের বনকেশর প্রকল্পের সভাপতি শ্রী নির্মল চন্দ্র বলেন, আদিবাসীদের কথা কেউ ভাবে না, কিন্তু আমাদের ভাগ্য উন্নয়নে কুচিয়া চাষ প্রকল্প শুধু আসিবাসীদের দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ টাকা সরকার দিয়েছে, আমরা পরিচর্যা করে যে টাকা ভাগ পেয়েছি তাতে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
এদিকে আদিবাসীদের কুচিয়া চাষ লাভজনক দেখে এই এলাকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক বেকার যুবকরা অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফার আশায় কুচিয়া চাষে ঝুঁকেছে। কলমা ইউনিয়নের বনগাঁ গ্রামের কুচিয়া খামার মালিক ইমরান আলী বলেন, তার পাশের গ্রামে আদিবাসীপাড়ায় কুচিয়া চাষ দেখে আমি নিজ উদ্যেগে করার জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেছি। সেখান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কুচিয়া খামার গড়েও তুলেছি। ৫ বিঘা পুকুর লীজসহ কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে যে লাভ হবে, সেই তুলনায় মাত্র ৩০ ফিট ১২ ফিট আবারের একটি কৃত্রিম পুকুরে কুচিয়া চাষ করলে অনেক বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। এ মাছ অনেকে না খাওয়ার জন্য চুরি ঝুঁকি কম এবং পুকুর হতে সহজে কেউ ইচ্ছে করলেও ধরতে পারে না। আর এ মাছের বাজারে প্রচ- চাহিদা হওয়ার বিক্রি করতে ভালো হয়। ২-৪ গ্রাম প্রতি কেজি কুচিয়া মাছ বিক্রি হয় ৩-৪শ টাকায়।
এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরাফাত সিদ্দিকী জানান, বর্তমান সরকার মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় আদিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে কুচিয়া চাষ প্রদর্শনী ও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় তানোর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে পাঁচটি প্রদর্শনী বাণিজ্যিক হারে সরকারের ও মৎস্য অধিদফতরের পৃষ্ঠপোষকতায় কুচিয়া প্রজনন শুরু হয়েছে। আদিবাসীদের লাভজনক ব্যবসা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা কুচিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর তারা আমার অফিসে প্রশিক্ষণ নিয়ে কুচিয়া খামার করার জন্য যোগাযোগ করছে। সরকারিভাবে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি।