তানোরে কৃষক-গবেষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা

আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৮:৫৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


কৃষকের আবিষ্কার, কৃষক গবেষণার অভিজ্ঞতা বিনিময় ও মূল্যায়ন বিষয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কৃষক গবেষক কর্মশালা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়েছে। রোববার উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন ফোরামের আয়োজনে সভায় বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৪০ জন কৃষক-কৃষাণী গবেষক এতে অংশগ্রহণ করেন।

তানোর উপজেলার স্বশিক্ষিত কৃষক গবেষক নুর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে কৃষক গবেষকেরা নিজেদের গবেষণা এবং চলমান কার্যক্রম উপস্থাপন করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষক-কৃষণীরা। স্বশিক্ষিত কৃষক গবেষক নুর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কৃষি কৃষকদের হাতে থাকতে হবে, গবেষণা এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে কৃষি উৎপাদন করতে হবে। আমি ২০০ ধানের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছি।

এর মধ্যে ৫টি সারির ফলাফল অনেক ভালো, উৎপাদনও বেশি হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলোর কোন স্বীকৃতি পাচ্ছিনা। আমার উদ্ভাবিত ধানের স্বীকৃতি দিতে সরকার যে নিয়ম চালু করেছে তা আমার পক্ষে ব্যায় ভার বহন করা সম্ভব নয়। আমি ধানগুলো কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।

লুপ্ত ধানের রক্ষক তানোর দুবইল গ্রামের বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক এর সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছর প্রায় ১১৫ থেকে ১৩০ টি দেশি ধানের চাষ করি, মূলত জাতগুলো যেন হারিয়ে না যায় এবং এগুলো কৃষকদের মধ্যে ছড়ি পড়ে চাষ করে এর জন্য আমি বারসিকের সহায়তা নিয়ে এগুলো সুরক্ষা করছি নিয়মিত।

পবা উপজেলার নদী কান্দা গ্রামের ১০টি দেশি জাতের কলা নিয়ে গবেষণা করছেন মোসলেমা বেগম, তিনি বলেন- আমি এবার পরীক্ষামূলক জাতগুলো চাষ করছি, এখন পর্যন্ত সব জাত অনেক ভালো ফলাফল দিচ্ছে।
নাচোল উপজেলার কৃষক গবেষক রায়হান কবির রঞ্জু বলেন, আমি দেশি ৭ জাতের দেশি কাসভা, ১৯ জাতের দেশি বেগুণের এবং ১২ জাতের দেশি মসলার গবেষণা করেছি। কাসাভার নিয়ে গবেষণা করে ভালো ফলাফর পেয়েছি, এগুলো এখন প্রায় ৫০ জন কৃষক কৃষাণী পর্যায়ে বিনিময় করেছি, চাষ করছেন। তিনি জাতগুলোর চাষ পদ্ধতির অভিজ্ঞতা তুলে ধনে।

ভার্মীকম্পোস্ট চাষী তানোর উপজেলার বহড়া গ্রামের আবদুল হামিদ ও পবা উপজেলার কাড়িগড় পাড়া গ্রামের বিলকিস বেগম ভার্মী কম্পোস্ট উৎপাদন, ফলাফল ও তৈরীর কৌশল পদ্ধতি তুলে ধরেন
এছাড়াও রবি শস্যের ১৫টি জাত নিয়ে গবেষণাকারী তানোর ঝিনাখোর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর আলম, তানোরের কৃষক মুজহারুল ইসলাম ৬টি জাতের মসলা, পবা উপজেলার সাহিদা বেগম ৪টি দেশি জাতের দেশি লাউ, ৬টি জাতের আউশ ধান নিয়ে সিরাজ উদ্দিন, দেশি জাতের ২২ টি সীম নিয়ে গবেষণাকারী কৃষাণী কবুলজান বেগমসহ অন্যান্য কৃষক-কৃষাণী গবেষকরা তাদের গবেষণার সফলতা এবং গরেবষণা পদ্ধতিগুলো তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভার শুরুতে বারসিক গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সভার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কৃষক পর্যায়ে যে গবেষণা এবং উদ্ভাবন তার স্বীকৃতি দিতে হবে। কৃষিপ্রতিবেশ সুরক্ষায় এবং কৃষকের অধিকারসহ খাদ্য সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কৃষক গবেষকগণ অসামন্য অবদান রাখছেন, এগুলো আরো ছড়িয়ে দিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বারসিকের প্রোগ্রাম অফিসার ( কৃষি) অমৃত কুমার সরকার ও সহযোগী কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ