তানোরে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বয়স্কভাতা উত্তোলন!

আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০১৭, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ইমরান হোসাইন, তানোর


রাজশাহীর তানোরে জীবিত মানুষের মৃত সনদ দিয়ে বয়স্কভাতা উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে ভাতা বঞ্চিতরা ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। এমন জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী আয়েন উদ্দিন বাদি হয়ে গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন এলাকায় সাড়ে ৩শ বয়স্ক মানুষকে ভাতা দেয়া হয়। এরমধ্যে ওই ইউনিয়ন এলাকার শুকদেবপুর গ্রামের আয়েন উদ্দিন, জামিন শিধাইড় গ্রামের আবুল কালাম ও ভাগনা গ্রামের সৈয়দা গত ১১ বছর ধরে বয়স্কভাতা উত্তোলন করে আসছেন। বর্তমানে তারা জীবিত থাকলেও তাদের মৃত সনদ দেখিয়ে ইউনিয়ন এলাকার শুকদেবপুর গ্রামের তফির শাহ, জামিন শিধাইড় গ্রামের আবদুস সামাদ ও ভাগনা গ্রামের রোকেয়া বিবিকে চলতি অর্থবছরে নতুন করে বয়স্কভাতার কার্ড পাইয়ে দেয়া হয়েছে। কার্ড পেয়ে তারা শনিবার সকালে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তিন মাসের এক হাজার ৫শ টাকা ভাতা উত্তোলন করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ ধরনের জালিয়াতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, সচিব, চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা। তারা মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে এমন জালিয়াতি করে ভাতাভোগীদেরকে হয়রানি ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছেন। তাদের পরিবর্তে নতুন করে যাদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের অনেকের বয়স ৬৫ বছরের নিচে। জন্মসনদ ও ভোটার আইডিতে বয়স বাড়িয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা এই জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
এনিয়ে ভুক্তভোগী আয়েন উদ্দিন জানান, তিনি ১১ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পান। শনিবার সকালে তানোর সোনালী ব্যাংক শাখায় ভাতার টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাতার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। নিরুপাই হয়ে তিনি রোববার সকালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যান। সেখানে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। এ কারণে তার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
আরেক ভুক্তভোগী জামিন শিধাইড় গ্রামের আবুল কালাম জানান, চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। তিনি মারা গেলে চেয়ারম্যান আগে জানবেন। বর্তমানে তিনি জীবিত মানুষ। কিন্তু চেয়ারম্যান তার মৃত্যুর সনদ দেন কী লজ্জায়? অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ইউপি সদস্য, সচিব, চেয়ারমান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা এতো বড় জালিয়াতি করেছেন। তিনি অবিলম্বে এই জালিয়াতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করার দাবি জানান।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, চলতি অর্থবছরে নতুন করে ৮ জন ব্যক্তিকে বয়স্কভাতার কার্ড দেয়া হয়। এরমধ্যে কে জীবিত আর কে মৃত সেটি যাচাই-বাছায়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অফিসের। তবে, চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক মৃত্যুসনদ দেয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মতিনুর রহমান বলেছেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মৃত সনদে এমনটি হয়েছে। চেয়ারম্যানের সনদ ও মৃত ব্যক্তির খোঁজখবর নিয়ে নতুন ভাতাভোগীর তালিকা প্রস্তুতের নিয়ম থাকলেও সেক্ষেত্রে জালিয়াতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে, সময়ের ব্যাপার বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেছেন, মৃত সনদ তার অজানতে হয়েছে। জালিয়াতির বিষয়টি সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে হতে পারে বলে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. শওকত আলী বলেছেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। যারা এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ