তানোরে ধূমপানে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা!

আপডেট: আগস্ট ৯, ২০১৭, ১:০১ পূর্বাহ্ণ

তানোর পৌর প্রতিনিধি


পাবলিক প্লেসে আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য ধূমপান আইনত অপরাধ হলেও মানছে না কেউই। বর্তমানে প্রাপ্ত বয়সীদের সঙ্গে সঙ্গে কিশোরদের মধ্যেও ধূমপানের আসক্তি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দেশের অন্যন্য স্থানের ন্যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝেও দিন দিন ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। এতে সাধারণ মানুষও উৎসাহিত হচ্ছে।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্কুল, কলেজের সামনে ও আশপাশের এলাকায় মুদি দোকানের আড়ালে সিগারেটের দোকানের আধিপত্য বেশি। আর এগুলোর ক্রেতা হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে হাতের নাগালেই মিলছে সস্তা দামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট। একই সঙ্গে তানোর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ও হাট-বাজার এলাকায় বেশির ভাগ দোকানে সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে। এসব সিগারেটের প্রতি পিস ২ টাকা থেকে ১১ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। পাবলিক প্লেস থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলছে অবাধে ধূমপান। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘন করে উপজেলার এসব দোকানগুলোতে অবাধ প্রদর্শন ও অবৈধ পণ্যের প্রকাশ্যে বিভিন্ন মৌখিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার চাপড়া মোড় এলাকার সিগারেট বিক্রেতা রুবেল আহম্মেদ জানান, অধিক লাভের কারণে শুধু সিগারেটের ব্যবসা করি। আমার কাছ থেকে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্ররাই বেশি সিগারেট কিনে। আর সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ কম থাকে বলে দাম বেশি দিয়েই তা কিনছে।
শরিফুল, কাদির, জাফর, মিলন, সুমন ও আরিফুল ইসলামসহ ৩০-৪০ জন উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবেদককে বলেন, সিগারেট শখের বসে খাই। খাইলে ভালই লাগে, মনে হয় শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সিগারেটের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, সিগারেট খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তা জানি। সাময়িক সময়ের জন্য সব দুঃখ কষ্ট থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। তাই আমাদের কাছে সিগারেটের কোনো বিকল্প নেই।
ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচ) ডা. রোজিয়ারা খাতুন বলেন, ধূমপানের কারণে মানুষের ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ব্রেইন স্ট্রোক, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মদান, শিশুদের কানের ইনফেকশন, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সিগারেট বা তামাকে যে রাসায়নিক পদার্থ বা নিকোটিন থাকে তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে এবং ধূমপায়ীকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অন্য দিকে সিগারেটের ধোঁয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অধূমপায়ীরাও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগী ও শিশুরা। ১১-১৫ বছরের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ সময় অধিকাংশ শিশু ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।
উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী যুবসংগঠন ‘একতা বন্ধু সংঘের’ সভাপতি আহসান হাবীব পলাশ অবশ্য মনে করছেন, আইনের প্রায়োগিক দুর্বলতায় এ ধরনের অবৈধ নেশাদ্রব্য প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এতে স্কুল-কলেজের তরুণ-তরুণীরা ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে- যা ভবিষ্যতে অন্যান্য নেশাদ্রব্যে আসক্ত হয়ে উঠতে সহায়ক হবে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার, এ জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তারা।
তবে সংগঠনটির সহ-সভাপতি রায়হান কবিরাজের মতে, তানোর উপজেলায়ও সন্তানের সামনেই অনেক বাবা ধূমপান করেন। এতে ওই সন্তানও ধূমপানে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ধূমপান সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
এ্যডভোকেট রায়হানুল কবির বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন ২০১৫ এ বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক প্লেস, ক্লিনিক বা হাসপাতাল, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধূমপান নিষিদ্ধ। আঠার বছরের কমবয়সী কারো কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় বা বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও আমরা দেখছি, আইন লঙ্ঘন করে তানোর উপজেলায় সিগারেট কোম্পানিগুলো তাদের প্রচারণা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ধূমপান শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও জেনে শুনে এবং অসচেতনতার কারণে কিংবা আবেগের বশে অনেকেই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ধূমপান বন্ধে সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে পারে ব্যক্তির সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি এমনটাই মনে করছেন তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ