মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
তানোর প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় তালন্দ কেন্দ্রে শিক্ষকদের সহযোগিতায় নকল চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয় অভিভাবকরা বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের অবগত করেন। অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা তালন্দ এএম উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এ খবর পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষকদের সতর্ক করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোরের তালন্দ এএম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় ১৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৮৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ৬৮৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন ছেলে ও ১৫ জন মেয়ে মোট ২০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তানোরের চারটি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি বছরের ১ নভেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরুর আগের মুহূর্তে এসব স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিটি পরীক্ষার অন্তত ১৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র মুঠোফোনে ছবি তুলে একজন শিক্ষক বাহিরে নিয়ে যান। পরে ওই বিষয়ের শিক্ষকেরা এসব প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করেন।
তালন্দ পূর্বপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, পরীক্ষায় একশ্রেণির শিক্ষকদের সহযোগিতায় নকল চলছে। তিনি বলেন, কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক (যারা প্রাইভেট পড়ায়) সমঝোতা করে পরীক্ষা শুরুর আগে মুঠোফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা বাইরে নিয়ে যান। পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকেরা সঠিক উত্তর লিখে তা পরীক্ষার হলে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালন্দ পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত এক শিক্ষক বলেন, চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, তালন্দ স্কুলের শিক্ষক নিরাঞ্জন, সঞ্জয় ও ফিরোজ তাদের কাছে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রের উত্তর বলে দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা অন্য স্কুলের শিক্ষক বলে তারা আমাদের নিষেধ শুনছেন না। আমরা ভয়ে তাদের অনিয়মের কোনো প্রতিবাদ করতেও পারছি না।
বিষয়টির বিষয়ে জানতে চাইলে তালন্দ এএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আলতাফ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলের কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার সাইমা আনজুমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় সাংবাদিকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি তালন্দ এএম উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখতে পাননি। তবে সাংবাদিকদের পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।