তীব্র তাপপ্রবাহে গুটি ঝরে পড়ায় এবছর লিচুর ফলন কম হয়েছে। শনিবার সকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া এলাকা থেকে তোলা।
শাহীন রহমান, পাবনা:
স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহে পুড়েছে উত্তরের কৃষি প্রধান জেলা পাবনা। এবছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রিতে। একদিকে জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। অন্যদিকে পশুপাখিসহ কৃষিতে নেমে আসে বিপর্যয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন লিচু চাষীরা।
পাবনাকে বলা হয় লিচুর রাজধানী। এখানকার লিচুর সুনাম দেশ ও বিদেশে। প্রতিবছর এ জেলা থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। এখানে দেশী জাতের পাশাপাশি বোম্বাই, চায়না থ্রী, বেদানা সহ বিভিন্ন জাতের লিচু আাবাদ হয়।
এ বছর লিচু গাছে প্রচুর মুকুল আসায় বাগান মালিক আর ব্যাপারীরা বেশী লাভের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের সে স্বপ্নে বাধ সাধে প্রচন্ড দাবদাহ আর খরা। রোদের তাপে লিচুর গুটি ঝড়ে পড়ে প্রায় অর্ধেক। নানাভাবে চেষ্টা করেও লিচুর গুটি ঝরে পড়া রোধ করতে পারেননি চাষীরা।
এদিকে, আবার কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে গাছের লিচু আরো ক্ষতি হওয়ার আশংকায় পুরোপুরি পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে আগাম জাতের লিচু ভেঙ্গে বিক্রি করতে শুরু করেছেন চাষীরা। গত দশদিন ধরে চলছে লিচু কেনাবেচা।
শনিবার (২৫ মে) সকালে পাবনার অন্যতম বড় লিচুর হাট ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর লিচুর হাট। কৃষকরা ঝুড়ি বোঝাই করে হাটে নিয়ে এসেছেন লিচু। সেই লিচু কিনতে দরদাম করছেন পাইকাররা। ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় লিচুর হাট। সকাল দশটার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এই হাটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় কোটি টাকার লিচু। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লিচু কিনে নিয়ে বিক্রি করেন সারাদেশে।
হাটে লিচু বিক্রি করতে আসা ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর গ্রামের লিচু চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার ফলন খুব একটা ভাল হয়নি। খরায় লিচুর গুটি অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। যেকারণে উৎপাদন খরচটা উঠবে।
নাজিরপুর গ্রামের লিচু চাষী মনির হোসেন বলেন, গত বছর আমার এক বিঘার বাগান থেকে যে লিচু বিক্রি করেছিলাম, এবার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারবো না। আবার ভয়, কখন না জানি ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়। তাই এবার একটু আগেভাগেই লিচু বিক্রি করে দিচ্ছি। দাম মোটামুটি আছে।
ঢাকা থেকে লিচু কিনতে আসা পাইকার ব্যবসায়ী হাকিম উদ্দিন বলেন, এবার লিচুর ফলন কম হলেও দাম বেশি। গত বছর যে লিচু প্রতি হাজার ২০০০ টাকায় কিনেছি। এবার সেই লিচু ২৫০০-২৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মান ও প্রকারভেদে প্রতি হাজার লিচু ১৮০০ টাকা থেকে ২৬০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
নারায়নগঞ্জ থেকে আসা আরেক পাইকার ময়েন আলী বলেন, পাবনার লিচুটা সারাদেশে ভাল চলে। একটা সুনাম আছে। ক্রেতারা এই লিচু খেয়ে সন্তুষ্ট। যেকারণে আমরা প্রতিবছর এখান থেকে লিচু কিনতে আসি। তবে এবার ফলন কম হলেও বাজারে দাম বেশি।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জামাল উদ্দিন বলেন, তাপপ্রবাহের সময় চাষীদের সাথে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গাছের গোড়ায় সেচ ও গুটিতে শুধু পানির স্প্রে করতে বলা হয়। যারা পরামর্শ শুনেছে তারা কিছুটা ভাল ফলন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, তবে ফলন কম হলেও বাজারে ভাল দাম পাচ্ছেন তারা। এতে তাদের লোকসান পুষিয়ে যাবে। আর পাবনার লিচু এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করবে বলে আশা করি।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর পাবনা জেলায় লিচু আবাদ হয় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে। আর এখান থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৭৮ মেট্টিকটন।