তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস II জবুথুবু জনজীবন, শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়েছে

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘনকুয়াশা। রাত-ভোর ঘনকুয়াশার আবরণে পথ-ঘাট ভিজে যাচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকও কমেছে। এতেই নামছে কনকনে শীত। হাড়কাপানো ঠান্ডায় জবুথুবু জনজীবন। চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পুরো রাজশাহী। শীতজনিত নানা জটিলতায় রোগিদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। উষ্ণতা পেতে শীত কাপড়ের দোকানগুলোতেও বেচাবিক্রি বেড়েছে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন। এরআগে শুক্রবার উত্তরের হিমেল হাওয়ায় রাজশাহীতে হঠাৎ তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছিলো। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি।

ঘন কুয়াশায় দুপুর গড়িয়ে দেড়টার পর সূর্যের দেখা মিলেছিলো কিছু সময়ের জন্য। যদিও হিমেল বাতাসে হাঁড়কাপানো ঠান্ডা ছিলো সারাদিনই। হঠাৎ তাপমাত্রার এমন নিম্নমুখি আচরণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দিনের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাঁধা সৃষ্টি করছেন এই ঠান্ডা। ছিন্নমূল ও খেটে-খাওয়া মানুষরা পড়েছেন বিপাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামেক হাসপাতালসহ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছিলো ৬২ জন। আর শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ৭২ জন। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বাড়তি ব্যবস্থাপনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডেও বৃদ্ধ ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এদিন সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ১১৪ জন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বের না হওয়াই ভালো। এছাড়া অন্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর চেয়ে আউটডোর রোগীর সংখ্যা বেশি। আর পরিস্থিতি খুব খারাপ, এমনটা না। এ সময়টায় রোগী কিছুটা বাড়ে। সে রকমভাবে ব্যবস্থাপনাও করা আছে।

শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে। নগরীর শিরোইল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ছিন্নমূল মানুষদের অনেকেই কষ্ট করে শীত নিবারণ করছেন।
দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন শ্রমজীবীরাও। সকালে কথা হয় এক নির্মাণ শ্রমিক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এই শীতে কাজ করা অনেক কষ্টের। কিন্তু জীবিকার তাগিদে ঘনকুয়াশা মাড়িয়েই ভোরেই কর্মক্ষেত্রে যেতে হচেছ।

এরআগে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ছিলো বৃস্পতিবার (৪ জানুয়রি) ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত ৩ জানুয়ারি রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ শীতের প্রকোপ বেশি। শৈত্যপ্রবাহ কয়েকদিন থাকতে পারে।

তিনি আরও জানান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই সেটি শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আর তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে করা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহীতে এখন মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।