শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘তারা জানে আমাকে খুন করা যায় কিন্তু আমার মাথা নত করা যায় না। তাই তারা দুনিয়ার কাছে আমার মুখ ছোট করতে চায়, যাতে বাংলাদেশকে কোনো দেশ সাহায্য না করে। সে জন্যই এই ষড়যন্ত্র চলছে।’
১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়াখালী জেলার মহকুমা শহর বরগুনায় আয়োজিত বিশাল জনসভায় দেশবাসীকে বিদেশি চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে এই উক্তি করেন।
বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যত দ্রষ্টাও ছিলেন। তাঁর উল্লিখিত বক্তব্যই তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর উঁচু শির নত করা সম্ভব হয় নি। তাই তাকে হত্যাই করতে হয়েছিল।
পাক-মার্কিন চক্রান্তকারীরা বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তাকে তাদের ছক বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে। এর ফলে তারা এই সিদ্ধান্তে স্থির হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা সম্ভব নয়।
আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চক্রান্তকারীরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। উগ্র বামপন্থি, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং দেশি- বিদেশি চক্রের আশ্রয়- প্রশ্রয় পেয়ে সারা দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। থানা আক্রমণ, অস্ত্র লুট, সরকারি পাটের গুদামে আগুন, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা, ডাকাতি-লুণ্ঠনের বাড়-বাড়স্ত শুরু হয়।
এমনই অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন আনা হয়। এই সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। তিনি ইচ্ছানুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারবেন। ১৯৭৫-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙ্গে দিয়ে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) নামে একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলের চেয়ারম্যান হলেন বঙ্গবন্ধু এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন এম. মনসুর আলী।
বঙ্গবন্ধু নতুন সরকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তিনি সাময়িকভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। দেশের আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনিবার্য হয়ে পড়ে। আস্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও চতুর্থ সংশোধনী গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছিল। উল্লেখ্য, বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে একক রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার নজির রয়েছে।
অধিকাংশ সংসদ সদস্য বাকশালে যোগ দেন। রাষ্ট্রপতিসহ কেবিনেট সদস্যগণ ও মন্ত্রীবর্গ সকলেই বাকশালের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, সংগঠন এবং মিডিয়ার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাহী কর্তৃত্ব আরোপ করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকার বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রম চালু করেন। জেলা প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়। জেলা সমূহে রাজনৈতিক প্রশাসনিক গভর্নর নিয়োগ করা হয়। মুদ্রা মানের সংস্কার, খাদ্য উৎপাদনে নতুন উদ্যোগে, রফতানি প্রসারে নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়। নতুন রাষ্ট্রিক কাঠামোর কার্যক্রম এবং ঘোষিত নীতিমালা বাস্তবায়নের মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম হত্যার শিকার হন।