‘তিন-চার মাসের মধ্যে’ নির্বাচন চাইল বিএনপি

আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপির পক্ষ থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
‘বড় ধরনের সংস্কার করে নির্বাচন’, আইএমএফের এক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এমন বার্তা দেওয়ার পর দিন সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই মন্তব্য এল।



বিকালে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠন করা কমিশনে জমা দেওয়া প্রস্তাব তুলে ধরতে এই আয়োজনে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে।
“আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচন সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার, এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।”
তিনি বলেন, “সরকারের আরও সংস্কারৃ প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে, এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩/৪ মাসের বেশি সময় লাগবে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেছিলেন। সেই রাতে বঙ্গভবনে বৈঠক শেষে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই ঘোষণা দেবেন।
সেদিন আরও কিছু কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি যা যা বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে নির্বাচন ছাড়া বাকি সব কিছুই ছিল।
গত ৮ অগাস্ট শপথ নেওয়া অন্তর্র্বতী সরকার নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা দিচ্ছে না, যদিও সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে, যে সময়সীমা এরই মধ্যে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
রোববার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা এবং ইউএনডিপির সাবেক প্রধান লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউনের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন প্রশ্নে বলেছেন, “সরকার অবাধ ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আগে ‘বড় ধরনের সংস্কার করতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই ‘বড় ধরনের সংস্কার নিয়ে অবশ্য সরকার প্রধানের দপ্তর থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার ‘স্ক্রুটিনি’ করা তারপরে নির্বাচনের কাজ; অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ২/৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।”

ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার বিরোধিতা
বিএনপির নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মঈন খান দলের এই অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “যদি সত্যিকার অর্থে সৎভাবে সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই, তাহলে কিন্তু বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, কম্পিউটার এআই আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা অবশ্যই সঠিক হবে।
“আমি কোন দিন ১৮ বছর হয়ে যাব, সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত ‘সময় সাপেক্ষ’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ভোটার তালিকা প্রণয়নে ‘বাড়ি বাড়ি যাওয়া’, আমরা এটা বুঝি নাই কী হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, তালিকা ঘোষণার সময়ে এটাও ঘোষণা করা হয় যে, কারো নাম যুক্ত না হলে তাহলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন; বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায় নি, এ রকম কেউ থাকলে কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেল, কারও নামে যদি অভিযোগ থাকে যে বেঁচে নাই, সেটা বাদ পড়ে যাবে।
“এরপর নির্বাচনি প্রস্তুতি, শিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এত বেশি সময় লাগার কথা না।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বিএনপির কী প্রস্তাব
সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন- আরপিও সংশোধনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া সম্পূরক আদেশ বাতিল, নির্বাচন পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনি আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপি সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে কমিশনের কাছে দিয়েছে।
মঈন খান বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ‘ডামি প্রতিনিধি’ না, ‘ভুয়া প্রতিনিধি’ না, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।”
আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে ‘কুক্ষিগত করতে’ অনেক কিছু করেছে অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে না পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সেজন্য আমরা ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে, পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
“আমরা বিশ্বাস করি, যে অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনি কোনো স্টেক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে আগে যুক্ত ছিল বা থাকতে পারে, তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না।”
এক প্রশ্নে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “কেয়ার টেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে। এটাই ছিল ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার সবচাইতে বড় বাধা একটা। ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা, এসব হচ্ছে উপসর্গ। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ার টেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version