তীব্র গরমে সুদিন ফিরেছে নওগাঁর হাতপাখা

আপডেট: মে ১১, ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:


সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। এসময় সবাই বৈদ্যুতিক ফ্যান আর সামর্থ্যবানরা এসি ব্যবহার করছেন। তবে অনেকেই ব্যবহার করেন হাতপাখা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের ভালাইন গ্রামের ৭০ থেকে ৭৫টি পরিবারের মানুষ।

এদিকে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হলেও বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। তবে তালগাছ কমে যাওয়া, আর্থিক সমস্যা, আগের মতো চাহিদা না থাকা এবং পরিশ্রমের তুলনায় লাভ কম হওয়া এই পেশার মূল সমস্যা। স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে তারা আরও এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন পাখা তৈরির কারিগররা।

নওগাঁ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ভালাইন। ওই গ্রামের দরিদ্র গ্রামীণ নারীরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তালপাতার হাতপাখা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটি এখন “পাখাগ্রাম” হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখা থেকে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পুরুষরা শুধু তালপাতা নিয়ে এসে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেয়। এরপর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গৃহবধূরা পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেন।

হাতপাখার কারিগর সুফিয়া বেগম বলেন, “একজন নারী প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। ১০০ তালপাখায় সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে ৭০ টাকা পান তিনি। তবে কাজের তুলনায় মজুরি খুবই কম।”

হাতপাখার কারিগর কমলা বানু ও শাপলা খাতুন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে তাদের তৈরি হাতপাখা কিনে নিয়ে যায়। তালপাতার সঙ্গে বাঁশের খিল, সুতা ও রং মিশিয়ে হাতপাখা তৈরি করা হয়। তবে লাভের পরিমাণ আগের তুলনায় কম। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা অথবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের।

তালপাখার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম ও শহীদ হোসেন জানান, তারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। প্রতিটি পাখা কিনতে হয় ৫ টাকায়। তালপাতাকে সুন্দর করে সাইজ করে রং করা পর্যন্ত খরচ পড়ে আরও দেড় টাকা। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৮-৯ টাকা। আর প্রতিটি পাখা বিক্রি হয় ১০-১১ টাকায়। এসব পাখা দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) নওগাঁর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, “ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা আরও বড় পরিসরে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজ কিস্তিতে ঋণ পেতে পারে।”

পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত তালপাতার হাতপাখা তৈরির সঙ্গে জাড়িতদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ সহজ শর্তে ঋণ দিলে অনেক বেকার মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।-বাসস

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ