নিজস্ব প্রতিবেদক:
সপ্তাখানেক থেকে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজমান। হাঁড়কাপা শীত জেঁকে বসেছে এই অঞ্চলে। শীতের কারণে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমের চিত্র নগর ও গ্রামের সর্বত্রই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে সন্তানের অসুস্থতা এড়াতে স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেন না অভিভাবকরা। এমন সত্যতা মিলেছে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কথায়। শিক্ষকরা বলছেন, স্কুলগুলোতে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলেও পুরোদমে আসছেনা শিক্ষার্থীরা। শীত কমলে পুরোদমে আসবে শিক্ষার্থীরা এমন প্রত্যাশা তাদের।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। এই স্কুলের প্রথম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। এই ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ১৭ জন। এছাড়া একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ৮০ জন হলেও ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ২৬ জন। এছাড়া নামো ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থায়। এই স্কুলটিতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। স্কুলটির কয়েকটি ক্লাস রুমের মধ্যে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৩৯ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল ২৩ জন।
ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুলতানা সাবানা বলেন, শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। কয়েকদিন আগে প্রথম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে এসে বমি করে। পরে তাদের ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়া শীতের কারণে কোনো কোনো শিক্ষার্থী ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিভাবকরা জানায়। তবে শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।
রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (হেলেনাবাদ) প্রধান শিক্ষক ইসাবেলা সাত্তার বলেন, শীতের কারণে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসে ছাত্রীদের উপস্থিতি কম। শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়ে যাবে।
দুর্গাপুর প্রতিনিধি জানান,
ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে দুর্গাপুরে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। উপজেলার ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৮১টি বিদ্যালয় ঠান্ডাজনিত কারণে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত কম হচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলা সদরে সিংগা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাক্তিবুল জানান, স্কুলে উপস্থিতি হার অনেকটাই কমেছে।
দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনির বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কম আসছে। শীতে শিক্ষকরা যথাসময়ে উপস্থিতি থাকলে শিক্ষার্থীরা একটু কম আসে। তাই শীতে ক্লাস কিছুটা দেরিতে শুরু করতে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি মোটামোটি।
আমগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলেন, বাইরে অনেক ঠান্ডা। ক্লাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। তার পরেও স্কুলে আসছি।
দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোকাররমের বাবা মমিন জানান, প্রচুর ঠান্ডা। সকাল বেলা আসতে অনেক কষ্ট হয়। যেসব শিশুদের ঠান্ডা জনিত সর্দি-কাঁশি-জ্বর আছে; তাদের ঠান্ডা লাগলে অসুখ বেড়ে যায়।
বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ আলী শিক্ষক জানান, শীতে উপস্থিতির হার প্রায় ৩০ ভাগ কমেছে। আগে ৯০-৯৫ ভাগ উপস্থিতি থাকলেও এখন শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গেলে অভিভাবকেরা বলছেন, ঠান্ডা লাগায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামীম আহম্মেদ জানান, উপজেলায় ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি কিন্ডার গার্ডেন ১৭ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী। শীতের প্রকোপে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে।
বাগমারা প্রতিনিধি জানায়, বাগমারা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমেছে। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি ও ভোকেশনাল, মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। সকালে সালেহা-ইমারত ডিগ্রি কলেজ, হামিরকুৎসা দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। শিক্ষকরা জানায়, তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।
আলোকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আয়েন উদ্দিন জানান, স্কুলে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শীতের কারণে কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। আশা করা যাচ্ছে শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।
এবিষয়ে বাগমারা উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার ড. আব্দুল মুমীত বলেন, তীব্র শীত হলেও এখনও বাগমারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা আসেনি। তবে শীতের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।
বাঘা প্রতিনিধি জানায়,
তীব্র শীতে বাঘার বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। শীতের কারণে অভিভাবকেরা শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেন না। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এমন তথ্যও জানা গেছে যে, স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
অভিভাবকদের ভাষ্যমতে, যেখানে প্রাপ্তবয়স্করাই শীতে জবুথবু অবস্থা, সেখানে পাঁচ–ছয় বছরের শিশুকে সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। এত ঠান্ডার মধ্যে সকালে স্কুলে যাতায়াতের কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
স্কুলশিক্ষকেরা বলছেন, শীত উপেক্ষা করে স্কুলে আসতে বেগ পেতে হলেও আবহাওয়ার সঙ্গে বাচ্চাদের মানিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ভোগান্তি সাময়িক সময়ের জন্য। বছরের শুরুতে বই পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতির হার ছিল ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের দৃশ্য। ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেক শিশুকে তাড়াহুড়ো করে স্কুলে আসতে দেখা যায়। তীব্র শীতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
নার্সারিতে পড়া ৫ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর বাবা রাশিদুল ইসলাম বলেন, তার মেয়ের ক্লাস শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে কয়েক দিন স্কুলে পাঠানো বন্ধ রেখেছেন।
উপজেলা সদরে বাঘা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনজারুল ইসলাম বলেন, শীতের তীব্রতার কারণে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের দুর্ভোগ বেশি বেড়েছে। তারপরেও অভিভাবকেরা স্কুলে নিয়ে আসছেন। তাঁর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৩০০। উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশ।
আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস জানান, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০। বর্তমানে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশ। তিনি জানান, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। তবুও তীব্র শীতের কারণে উপস্থিতির হার কমেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২২টি কিন্ডারগার্টেন মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মামুনুর রহমান জানান, উপজেলায় গড় উপস্থিতির হার ৬৫ শতাংশ। আমাদের দেশে শীতের প্রভাব জানুয়ারি মাসে বেশি থাকে। এ সময় ভর্তি, বই বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চলে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহা. নাসির উদ্দিন বলেন, শীতের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তবে শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।