হাসান পলাশ:
একজন জেলা প্রশাসক অফিস সময় সকাল থেকে শুরু করে রাত্রি দশটা পর্যন্ত চালিয়ে গেছেন। করোনা কালে প্রথম শ্রেণির করোনাযোদ্ধা হিসেবে মাঠে থেকেছেন। একই সাথে তিনি অন্যদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। এর ফলে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েও জেলায় করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন বণ্টন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছেন। তাই করোনাকালেও জেলা প্রশাসন সরকারি কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পেরেছে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্যদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্বপ্ন পূরণের অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে জেলায় ৫ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করে রাজশাহী জেলাকে ক-শ্রেণিভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করেছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল তাঁর কার্যালয়ের কাজের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দিয়েছেন। মোট ছয় দফায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ১১৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় রাজশাহীতে ৬০ জনকে চাকরি দিয়েছেন। এই স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ফলে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কাজের গতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল তাঁর মেয়াদকালে সবচেয়ে বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করেছেন এবং অধিগ্রহণ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। এই জেলার রাজশাহী মহানগরীতে সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার শীর্ষক প্রকল্প, বিসিক শিল্প নগরী প্রকল্প, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প, ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্প, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে প্রায় এক হাজার বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেছেন। জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত যারা, তারা কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই এবং কোনো ধরনের ঘুষের শিকার না হয়েই দ্রুত সময়ের মধ্যে জমির সমুদয় অর্থ মূল্য ফেরত পেয়েছেন। তাঁর এসব কার্যক্রমে মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো সুযোগই ছিল না।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল রাজশাহী থেকে বদলি হওয়ার খবরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ছুঁয়ে যেতে পেরেছেন। তাঁরা কষ্ট পেয়েছে, ভারাক্রান্ত হয়েছে এবং জেলা প্রশাসকের সহচার্য তাদেরকে আনন্দ ও উৎসাহ যুগিয়েছে। তাঁর পৌনে তিন বছরের রাজশাহী অবস্থান সময়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয় জনসাধারণের জন্য অবাধ ও উন্মুক্ত হয়েছে। তিনি একজন সদাচারী মানুষ, জনসাধারণের অভিগম্যতাকে নিজের দায়িত্ব হিসেবে পালন করেছেন। তিনি জনসাধারণের দুঃখ-কষ্টকে শুনেছেন, অনুভব করেছেন এবং সমস্যার সমাধান করেছেন। এ কারণে তিনি রাজশাহীর তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা লাভ করেছেন।
নগরীর ফুদকিপাড়ার মোসা. আনোয়ারা বেগম বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে পেয়েছেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। একই এলাকার আব্দুল মমিন পেয়েছেন ৭১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। একই এলাকার নিজাম উদ্দিন পেয়েছেন ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ সময় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা জানান, পূর্বে অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলন করতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে যেত, তবুও ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকেরা নিজের প্রাপ্য টাকা পেতেন না। আবার পেলেও অনেক কাট-খড় পোড়াতে হত। কিন্তু বতর্মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জবাবদিহিতামূলক, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকরা তিনগুণ মূল্য ক্ষতিপূরণ পেয়ে জেলা প্রশাসকের প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় ও এশিয়ার প্রথম ‘ক্ষুদ্রতম মা’ পবার মাসুরা থাকতেন অন্যের জমিতে ঘর করে। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মাসুরা-মনিরুল দম্পতিকে ঘর করে দিয়েছেন। ‘ঘর ছিল আমার স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে শেখ হাসিনা মা’ অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মাসুরা সোনার দেশকে জানায়, ‘আমার থাকার মত জায়গা-জমি ছিল না। পরের বাড়িতে কাজ আর চাচার জমিতে থাকতাম। ক্ষুদ্রাকৃতির হওয়ায় সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন মা শেখ হাসিনা জায়গাসহ ঘর দিয়েছেন। আমি তাতে অনেক খুশি। তার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে মোনাজাত করি, আমাদের মতো গরিবদের পাশে যেন তিনি সারাজীবন থাকতে পারেন এবং আমাদের চোখের পানি যেন মুছে যায়।’ ঘর পেয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান মাসুরা।
নওহাটার মুচি দম্পতি তপন-টুলু’র মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। তপন-টুলু মুচি দম্পতি বলেন, ‘শীত বাদলায় ম্যালা কষ্ট করছি, ভালো কইরা ঘুমাইবার পারিনাই। ওহন ঘর পাইছি, থাকার আর কোনো চিন্তা নাই। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ডিসি স্যার সাক্ষাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হইয়ে আমগো নতুন ঘর, খাট ও কারেন্ট দিছে এখন মনের শান্তিতে ঘুমাইবার পারমু। আমগো প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে হামি তার মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা কইরছি ও পরিবার-পরিজন লইয়ে সুখে থাহুক এই কামনা কইরছি।’
রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া জামে মসজিদ এলাকার বাসিন্দা স্বজনহীন অসুস্থ আফসার উদ্দীনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি পেপার বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকির দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি রাজশাহী’র দুই ভাষা সৈনিকের মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি ও আবুল হোসেনের বাড়িতে ফুল, ফল ও মিষ্টি নিয়ে সম্মান জানান। অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বায়া সেফ হোমের অনাথ কন্যা অন্তরা ও শিরিনার বিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু সাবা ও সারা’র উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
সাবা ও সারা’র বাবা মোহাম্মদ দস্তগীর আব্দুল্লাহ বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের আয়েশা তাবাসসুম সাবা ও ছোট মেয়ে সাইবা জাফরিন সারা। এবার জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় আমার মেয়েরা যৌথভাবে বাংলাদেশে জাতীয় রেকর্ড করেছে সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু হিসেবে। সেজন্য আমি অনেক আনন্দিত। রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আব্দুল জলিল মহোদয় আমার মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাঘা উপজেলার শিমুলিয়া এলাকার অসহায় পরিবারের মেধাবী ছাত্র শাখাওয়াত এর অর্থের অভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
সহায়তা পেয়ে শাখাওয়াত জানান, মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভেবেছিলাম- আর্থিক দৈন্যতার কারণে হয়তো আর মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা হবে না। কিন্তু আমার এমন অনিশ্চয়তার কথা জেনে জেলা প্রশাসক স্যার পাশে দাঁড়ালেন। এই যেন কোনো দেবদূত বা ফেরেশতা আমার পাশে দাঁড়ালো। এ জন্য আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। আমার ডাক্তার হওয়ার পথকে সহজ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আল্লাহর কাছে জেলা প্রশাসক স্যারের সর্বাত্মক মঙ্গল কামনা করি। দুর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর এলাকার করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষ মুদি দোকানি আব্দুল মালেকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
আব্দুল মালেকের মেয়ে আইরিনা জানান, অসুস্থ বাবা আইসিইউতে ভর্তি, প্রায় ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ইঞ্জেকশন কিনতে বলেছেন ডাক্তার। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা প্রায় নিঃস্ব। কোনো উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় এক সাংবাদিকের পরামর্শে তিনি জেলা প্রশাসকের নিকট একটি আবেদন করেছিলেন। যেটি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল স্যারের আন্তরিকতার সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতেই মঞ্জুর করেছেন এবং আমাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি বাবার খোঁজ খবর নিয়ে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমি চির কৃতজ্ঞ স্যারের কাছে।
নগরীর মেহেড়চন্ডী কড়ইতলা বৌ বাজার এলাকায় ক্যান্সার আক্রান্ত তানজিলার দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
সুবিধাভোগী তানজিলা জানান, আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে নগরীর মেহেড়চন্ডী এলাকার আব্দুর রাজ্জাক এর বাসায় ভাড়া থাকি। আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। লকডাউনের ফলে আমার স্বামী গত একবছর থেকে কর্মহীন, তাই এক কন্যা সন্তান নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
তিনি আরও জানান, নিদারুণ অভাব অনটনের কারণে নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল স্যারের সাথে আমার কথা হয়। তিনি দ্রুততম সময়ে মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে আমার পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক স্যারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।