শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিনিধি
বাধ্যতামূলক ন্যূনতম ‘৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তিনটি সেশনের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা হলে কয়েকজন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন চালায়। শিক্ষার্থীরা বলছে, আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের বাধা ও হুমকি দেওয়ায় শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। এরপর বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে যান। সেখানে শিক্ষকরা শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের বের করে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষকরা ফিরে যান। প্রায় ১০ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ ছিল বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা সোমবার সকালে শহীদ মিনারের সামনে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচিতে আসতে থাকি। কিন্তু এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের আসতে নানাভাবে শিক্ষকরা হুমকি-ধামকি দেয় এবং তাদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলে। এছাড়া আন্দোলনে আসার সময় কয়েকজন শিক্ষক শেখ হাসিনা হলে ছাত্রীদের আন্দোলনে আসতে বাধা দেয় এবং তাদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে হলের গেটে তালা দেয়। ওই ছাত্রীদের নামের তালিকাও তৈরি করেন শিক্ষকরা। এসময় ওই ছাত্রীরা আমাদের খবর দিলে আমরা সেখানে যাই। তারপর সেখানে হল গেট অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করি।
পরে বিকেল ৩টায় রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রহমান নিবিড় ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহাফুজুর রহমান তপু সেখানে গিয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের বের করে নিয়ে আসেন।
জানতে চাইলে রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রহমান নিবিড় বলেন, ‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন, তারা যাতে অসম্মানিত না হন, আমরা সে চেষ্টা করেছি। এটা মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর তারাই হল থেকে শিক্ষকদের বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।’
জানা যায়, রুয়েট শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হবার ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টারে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। অন্যথায় তাকে পুনরায় সেই বর্ষেই থাকতে হবে। এর আগে নিয়ম ছিল, কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন না করলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে ওই ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নিয়ম পরিবর্তন আনা হয়।
এদিকে, ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানায়, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একই সঙ্গে এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, তাদের দাবির বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের আন্দোলনে ১১ আগস্ট একই দাবিতে রুয়েটের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেন রুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। টানা দুই দিন আন্দোলনের পর ১২ আগস্ট রাতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সকল ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে তখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসেন।