বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দফায় দফায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চলছে ইট-পাটকেল, লাঠিসোঁটাসহ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মাথায় হেলমেট ও হাতে লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের হটিয়ে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয়। আন্দোলনকারীরা দাবি, ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাস এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে কোটা আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে বিকাল ৩টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হলপাড়ায় গেলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে দফায় দফায় প্রায় এক ঘণ্টা চলতে থাকে এই হামলা। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে করতে বিকাল ৪টার দিকে ভিসি চত্বর নিয়ে আসে ছাত্রলীগ।
সোয়া ৪টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একযোগে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তারা দুই ভাগে নীলক্ষেত ও ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে চলে যায়। পরে পুরো ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রেণে চলে আসে। এসময় কোটা আন্দোলনকারীদের পাওয়া মাত্রই লাঠি-সোঁটা দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে ছাত্রলীগের হামলায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে যান। বিকাল সোড়া ৫টার দিকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে গেলে আনসার সদস্যরা তাদের বাইরে চলে যেতে অনুরোধ করেন। পরে জরুরি বিভাগের সামনের সড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা ইট-পাটকেল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ঢামেক হাসপাতালে দুই শতাধিক আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। হাসপাতালের সামনে ও ভেতরে অতিরিক্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের জন্য আন্দোলনকারীদের দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা দেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেখতে পাচ্ছি। আজকেও তারা পূর্বপরিকল্পিত এবং উস্কানিমূলকভাবে কর্মসূচি দিয়েছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল তাদের উপর নারকীয়ভাবে হামলা চালিয়েছে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে রাজাকারের প্রেতাত্মাদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানাবো যারা এই ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে বিনষ্ট করতে চায় তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিক। আর ছাত্রলীগ তাদেরকে রাজপথে শায়েস্তা করার জন্য প্রস্তুত আছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বিকেল থেকে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেকে আহত হন। এছাড়া সোমবার বিকেলে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন।