দরিদ্র স্কুল ছাত্রীদের জন্য সাইকেল || সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চাই

আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের শিক্ষা এগিয়ে নিতে সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান করা হয়। এটি সেখানের খুব কার্যকর একটি উদ্যোগ। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের মেয়েদের শিক্ষায় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে শিক্ষায় মেয়েদের এগিয়ে নিতে সরকারের বেশ কিছু কর্মসূচি আছেÑ ইতোমধ্যেই যা খুবই কার্যকর হয়েছে। বিনামূল্যে বই তো আছেই সেই সাথে উপবৃত্তি এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে মেয়েদের পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু তৃণমূলের মেয়ে শিক্ষার্থী দুর্গম ও দূর পথের কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না। এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় এখনো আসেনি।
কিন্তু চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ তেমনি একটি প্রণোদনার সৃষ্টি করেছে যা সারা দেশে প্রশংসিত হচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক সোনার দেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে কচুয়ার স্কুলশিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সাইকেল দেয়ার এই উদ্যোগটি নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। নারীশিক্ষার হার শতভাগে নেয়ার লক্ষ্যে ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে উপজেলার ৩৯টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩০০ গরিব মেধাবী ছাত্রীর যাতায়াতে সুবিধার জন্য সাইকেল দেয়া হয়েছে। সাইকেলের সুফল যে পাওয়া যাচ্ছে, তা স্পষ্ট মানছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকগণ। সাচার বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বটুকৃষ্ণ বসুর কথায় যেসব ছাত্রী সাইকেল পেয়েছে, তারা নিয়মিত স্কুলে আসছে।
নারীদের ঘরে আটকে রাখতে যখন হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো মাঝে-মধ্যেই আওয়াজ তুলে থাকে। নারীকে গৃহবন্দি রাখার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের মধ্যে সাইকেল প্রদান কর্মসূচি একটি যুৎসই উদ্যোগ। ধর্মীয় গোঁড়া যারা তারা কোনেভাবেই নারীর স্বাভাবিক চলাচলকে স্বীকার করে না। নারীর মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য- জাগরণ ওইসব মানুষদের ভীষণভাবে ভীত করে তোলে। সে কারণেই তারা নারীর প্রতি আঘাত হানতে চায়, ফতোয়া দিয়ে নারীকে অধস্তনÑ ক্রীতদাস বানাতে চায়। এই প্রবণতার সমাজ ও বা রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে টেনে ধরে। শান্তি ও প্রগতিকে রুখে দিতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে আজঅবধি মৌলবাদ- সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বি করে তোলাটাই একটি বিরাট লড়াই যা বাংলাদেশকে করতে হচ্ছে। বিশ্বে এখন এটিই প্রমাণিত সত্য যে, যে সমাজে নারীর সম্মান নেই, সেই সমাজ সভ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে না। উন্নয়নের শর্তটিও তাই যে, উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারার সাথে নারীকে সমান সুযোগ করে দিতে হবে।
জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতির যে লড়াই তার সাথে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরজন্যই তৃণমূল নারীদের শিক্ষিত হয়ে ওঠা খুবই প্রয়োজন। নারীর মধ্যে যে জড়তা তা কাটাতে সাইকেল কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সাইকেল চালনার মধ্যে নারীর সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা যায়। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগের দাবি রাখে।
একটি ব্যক্তি উদ্যোগ যে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেÑ তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। সরকার এ উদ্যোগে সাড়া দিলে নারীদের শতভাগ শিক্ষিত করার লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।