দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় শিবগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষে ঝুঁকছে কৃষক

আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪, ১:৩২ অপরাহ্ণ

দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় শিবগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষে ঝুঁকছে কৃষক

শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)সংবাদদাতা:


দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় শিবগঞ্জে দিন দিন স্ট্রবেরি ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ২০১২ সালে যখন মোট চার হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি ফলের চাষ হয়েছিল সেখানে এ বছর আবাদ হযেছে ১২০ হেক্টরের বেশি জমিতে। কৃষকের সংখ্যা প্রায সোয়া শতাধিক কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় স্ট্রবেরি ফলের চাষে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছে। আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া শিবগঞ্জের উৎপাদিত স্ট্রবেরি অধিক সুস্বাদু।

সরেজমিনে গিয়ে জমিতে কাজ করা অবস্থায় কথা হয় দূর্লভপুর ইউনিয়নের পারকালূপুর মাঠে চল্লিশরশিয়া গ্রামের আহাদ আলির সাথে। তিনি জানান, চার বিঘা জমি বছরে বিঘাপ্রতি ৬০ হাজার দরে বর্গা নিয়ে চার বছর আগে স্ট্রবেরি ফলের আবাদ শুরু করি। প্রথম বছর লাভ কম হলেও পরের বছর থেকে ফলন বৃদ্ধি পাওযায় লাভও বেশি হয়েছে। এভাবেই প্রতিবছরই লাভের অংক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বছর চার বিঘা জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি প্রায় ১৬ লাখ টাকার। সামনে আরো দেড় মাস ফলন হবে এবং আরো চার লাখ টাকার স্ট্রবেরি ফল বিক্রি করতে পারবো। তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসের দিকে এ ফলের দাম পেযেছি কেজি প্রতি ১২-১৩শো টাকা। বর্তমানে দাম পাচ্ছি ২৫০-৩০০ টাকা। তিনি আরো জানান, সংগে সংগে পুরুষ ও নারী মিলে ১৬ জন জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। খরচ বাদে নয় লাখ টাকা লাভ পাওয়া যাবে।

শ্রমিক লালমোহাম্মদ, একবর আলি ও শামীমসহ ১০ জন শ্রমিক জানান, আমরা প্রায় ছয় মাস স্ট্রবেরি জমিতে কাজ করে দিন প্রতি ৫শো টাকা উপার্জন করতে পারি। তবে নারীদের ক্ষেত্রে পারিশ্রম কম। পপিয়ারা বেগম জানান, শুধু স্ট্রবেরি ফল উঠার সময় ব্যাগিং করার কাজ করি । প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা কাজ করে একশো টাকা উর্পাজন করতে পারি।

একই কথা বললেন রহিমা খাতুন, জেসমিন খাতুন, সোহগী খাতুন সমিজা খাতুন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিয়া খাতুন, মাহামুদা খাতুন সহ ১০/১২জন নারী। তারা বলেন, সংসারের ও শিক্ষার কাজ বজায় রেখে এখানে ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করি। তাতে একশো টাকা করে পাই। পার্শ্ববর্তী আবুল কাসেম জানান, ১৫ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করেছি। নিজেই কাজ করি। তারপর লাভ খুব একটা বেশি হবে না। কারণ স্ট্রবেরির গাছে মাকড় পোকার আক্রমণ ও অন্য একটি রোগে গাছ মরে যাওয়ায় হতাশা বোধ করছি। তবে খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকা লাভ হতে পারে।

উপজেলায় সবচেয়ে বেশি স্ট্রবেরির চাষ হওযা দূর্লভপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি অফিসার রয়াল হোসেন জানান, দূর্লভপুর ইউনিয়নে মোট তিনশো কৃষক ৬০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন। প্রায় সবাই সফল হয়েছেন।

অন্যদিকে শিবগঞ্জ পৌরসভাধীন ঝাকসুপাড়া গ্রামের মৃত সাদেক আলির ছেলে ও শিবগঞ্জ বাজারে মা জুয়েলার্সের মালিক আব্দুল করিম জানান, পিঠালীতোলা মাঠে ইদগাহের পাশে তিনবিঘা জমি বছর প্রতি ১৮ হাজার দরে তিন বছরের জন্য বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করে প্রচুর লাভবান হয়েছি। তার খরচ বাদে প্রায় ১০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে এবং আগামী একমাস ফল উঠবে বলে আশা করছি।। গত দুই বছরে বেশী লাভ হয়েছিল। তবে আমি স্বর্ণকারের কাজ করায় জমিতে থাকতে পাই না। তাই সবগুলো শ্রমিক দিয়ে করাতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০-১২ জন পুরুষ কামলা খাটেন এবং ৮-৯ জন শ্রমিক জমি থেকে ফল উঠাচ্ছেন এবং ৮জন নারী শ্রমিক ফলগুলো ব্যাগিং করছেন। পুরুেষ শ্রমিকরা জানান আমরা বছরে প্রায় ছয় মাস প্রতিদিন পাঁচশো টাকা হারে কাজ করি। অন্যদিকে নারী শ্রমিকরা জানান, আমরা সংসারের কাজ বজায় রেখে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা কাজ করি । বিনিময়ে দেড়শো টাকা করে পাই। শিবগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি অফিসার গোলাম আজম জানান, পৌরসভার অধীনে বিভিন্ন মাঠে ৩০ জন কৃষক পাঁচ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করে সবাই সফল হয়েছে। তবে চেষ্টা চলছে এ ফলের চাষ আরো বেশি করার। তবে অনেকে মন্তব্য করেন, নারী শ্রমিকের মুজুরি বেশি হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষযে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুনাইন বিন জামান বলেন, এ বছর শিবগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নে একটি পৌরসভায় ৪২৫ জন কৃষক ১২০ জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করে সফল হয়েছে। শিবগঞ্জের মাটি স্ট্র্রবেরি চাষ করার জন্য খুবই উপযোগী। ফলন বেশি ও খেতেও খুব স্বাসাদু। এ ফলের চাষ করা খুবই লাভজনক । এ বছর ফল উৎপাদনের লক্ষামাত্রা ছিল নয় হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আারো বলেন, আগামী বছর আরো চাষ বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিটি স্ট্রবেরি জমিতে গিয়ে উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ দেখাশুনা ও কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে মাকর পোকার আক্রমণ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে এ ফলের উদ্যোক্তা ও রাবির শিক্ষক অধ্যাপক মুনজুর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেছি। কোনো ফল হয়নি। তবে কীটনাশক লিকার. ৭মিলি নেম্রসিন এক গ্রাম, ভাইমেনসিন ১মিলি থ্রী অপসন০.৫মিলি রিভোসির গোল্ড তিনদিন পরপর ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি। তাতে মাকড় পোকর আক্রমণ থেকে অনেকটা রক্ষা পেয়েছে।

আরও পড়ুন: দাম ও ফলন বেশি হওয়ায়

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ