সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
শত দারিদ্রতা ওদের হার মানাতে পারেনি। অভাব অনটন পারেনি ওদের দমাতে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার হোটেল বয় দেলোয়ার হোসেনের (৪৫) আক্ষেপ ‘নিজের তো হলো না। একমাত্র সন্তান রাকিবুল হাসান জয়কে পড়াশোনায় সুষ্ঠু পরিচর্যায় মানুষের মত মানুষ করব। নিজে না পেরে ওঠার দুঃখ সন্তানকে দিয়ে ঘুচাব।’
দেলোয়ারের প্রচেষ্টায় সফলতা পেয়েছে তার একমাত্র সন্তান রাকিবুল হাসান জয়। শিক্ষাঙ্গণ ও বাড়িতে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ও পরিচর্যায় সৃজনশীল বিকশিত মেধায় ২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে। দেলোয়ার (৪৫) বছর দশেক আগে ৫০/৬০ টাকায় দিন মজুরিতে হোটেল বয়গিরি শুরু করেন। গত নভেম্বর ২০১৫ থেকে ২০০/২৫০ টাকা দিন মজুরিতে শহরের আজাদ হোটেলে এখন বয়গিরি করছেন। এত অল্প আয়ে দুঃখ-দুর্দশায় তিনি ভেঙে পড়ে নি। জেলা সদরের পুরানাপৈল ইউপির সোনার পাড়ার মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৪৫) অনেক স্বপ্ন নিয়ে ২০০০ সালে একই গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের সপ্তম শ্রেণি পড়–য়া চামেলী বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তানের জয়ের জন্ম ২০০২ সালে ৯ অক্টোবর। ৫ বছর বয়সে পড়াশুনার ভীত তৈরি করতে একই পুরানাপৈল ইউনিয়নের করিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করা হয়। জয় সেখান থেকে ভালো ফলাফলে পিএসসি পাস করে। মাধ্যমিক স্তরে আরো ভাল ফলাফলের আশায় দেলোয়ার জয়কে নিকটস্থ টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করে দেয়। স্কুলটির দৈনিক পাঠক্রম পরিচর্যায় বিকেলে কোচিং ও মাসিক অভিভাবক সমাবেশ ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশে সহায়তা দেয়। বাড়িতেও একই মানের সঠিক পরিচর্যায় ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় রাকিবুল হাসান জয় গোল্ডেন এ প্লাস পায়।
রাকিবুল হাসান জয়ের পিতা দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও মাতা চামেলী বেগম (৩০) বলেন, অভাব অনটনের মধ্যেও কষ্ট করে ছেলেকে মাসিক ৩শ টাকা বেতন ও ৩শ টাকা দিয়ে কোচিং এ পড়াশুনা করাচ্ছি। ছেলের ভালো ফলাফল দেখে আমরা অভিভুত। তারা বলেন, আমাদের একমাত্র ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য যতদূর পড়বে আমরা পড়াবো। এর জন্য যতরকম দুঃখ সহ্য করতে হয় করবো।
টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুল ইসলাম ও শ্রেণি শিক্ষক মো. জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, তাদের বিদ্যালয় থেকে ২১ জন পরীক্ষার্থী ২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ২ জন গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। গোল্ডেন এ প্লাস-এ উত্তীর্ণ জয় (১৪) ভালো ফলাফলে তার অভিব্যক্তিতে জানায় সে প্রতিদিন পড়াশুনায় ১ ঘণ্টা করে সময় দিয়েছে এবং যা পড়েছে তা বুঝে শুনে পড়েছে। নিয়মিত কোচিং অনুসরণ, পিতা-মাতার সুষ্ঠু দিক নির্দেশনা ও পরিচর্যা তাকে এমন ফলাফল পেতে সক্ষমতা এনেছে।
সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমন ভালো ফলাফল এসএসসি ও এইচএসসিতেও নিশ্চিত করতে চায়। এমন ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যত জীবনে একজন সফল প্রকৌশলী হয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। সে সকলের শুভেচ্ছা ও শুভাশীষ কামনা করেছে।