দুই বছর পর বিবাদ মিটিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই লাশ হলেন তারা, বাবা-মা-ছেলেকে পাশাপাশি দাফন

আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:


পাবনার ঈশ্বরদীতে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫ জনের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনের দাফন শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার দিয়াড় বাঘইল কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ বিদায় জানাতে জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। পরে জানাজা শেষ করে বাঘইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে পাশাপাশি তিনটি কবরে দাফন করা হয়েছে বাবা-মা ও ছেলেকে।

কবরে শায়িতরা হলেন-উপজেলার বাঘইল গ্রামের একই পরিবারের মৃত বাবু হোসেনের ছেলে রাব্বি হোসেন (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা খাতুন (২৭), তাদের ছেলে মুস্তাকিম (২)।
এদিকে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে যখন নিজ গ্রামে একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তখন থেকেই গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। একসঙ্গে একই পরিবারের তিনজনের এমন করুণ মৃত্যু স্বজনরা মেনে নিতে পারছিল না।

নিহতের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত রাব্বি হোসেন তার স্ত্রী মুক্তা খাতুন ও ছোট্ট ছেলে মুস্তাকিমকে নিয়ে ইদের কেনাকাটা করে অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় অটোরিকশাটি দাশুড়িয়া বহরপুর এলাকা পর্যন্ত পৌঁছালে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা ৩ জনই ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ঘটনায় অন্য এলাকার আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত রাব্বি হোসেনের ছোট ভাই মো. সায়েম বলেন, আমার ভাই-ভাবী ও ভাতিজা বাজারে শপিং করে বাড়ি ফেরার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আমাকে হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে জানানো হলে আমি এসে দেখি তাদের মরদেহ পড়ে রয়েছে। এমন করুণ মৃত্যু যেন আর কোনো পরিবারের না হয়।

শুক্রবার সকালে রাব্বির বাাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে, পুত্রবধু ও একমাত্র নাতিকে হারিয়ে পাথর প্রায় রাব্বির মা। একই সাথে তাদের হারিয়ে নানা বিলাপ করছে পরিবারের সদস্যরা। তাদের মৃত্যুর খবর শুনে রাব্বির বাড়িতে এসে ভিড় করছে এলাকাবাসী।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে ভালোবাসার সম্পর্কের পর পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় রাব্বি-মুক্তা দম্পত্তি। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর পারিবারিক কলহের জেরে গত ৫ মাস যাবৎ বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিল মুক্তা। পারিবারিক বিবাদ শেষে শুক্রবার (২১ মার্চ) শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো মুক্তা খাতুনের। সেই লক্ষেই আগের দিন বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী বাজার থেকে কেনাকাটা শেষে বাবার বাড়ি উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামে ফেরার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও সন্তানসহ মারা যান মুক্তা খাতুন।

এদিকে নিহতদের জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল ছাড়াও হাজারো মানুষ। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মরদেহ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করে দাফনের অনুমতি দিয়েছি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version