দুই শিশু মৃত্যু, অনুসন্ধানে তৎপর আইইডিসিআর’র প্রতিনিধিদল II হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন শিশুদের মা-বাবা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীতে কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়েই খাওয়ার (!) পর ‘অজানা ভাইরাসে’ আক্রান্ত হয়ে পরপর দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে। হঠাৎ করে দুই বোনের এমন মৃত্যু এবং নিপা ভাইরাস, করোনা ও ডেঙ্গু নেগেটিভ রিপোর্ট দেখে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগও। ঘটনা খতিয়ে দেখতে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এসেছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলাসহ নমুনা সংগ্রহ করছে আইইডিসিআর প্রতিনিধি দল। তাদের সুপারিশেই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন শিশুদের মা-বাবা।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। এদিন সকাল ১০টা থেকে আইইডিসিআর এর দলটি হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপাহ আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি ওই দুই শিশুর বাবা মিজানুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন। তারা নিহত দুই শিশু ও তাদের মা-বাবার রোগের কেস হিস্ট্রির বিষয়ে শোনেন। এছাড়া মৃত শিশুদের পাকস্থলি থেকে সংগ্রহ করা নমুনা তারা নিয়েছেন।

এ সময় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা রাজশাহীর চারঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে তারা তাদের বাসস্থান সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারের নমুনা সংগ্রহ করবেন। এছাড়া কোয়ার্টারের কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) কলেজ ক্যাম্পাসের যে গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন, সে গাছের নমুনা সংগ্রহ করবেন। এছাড়া ওই গৃহকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।

ঢাকার ওই প্রতিনিধি দলে আছেন আইইডিসিআর-এর মেডিকেল অফিসার ডা. ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স ও ডা. মো. মাইনুল হাসান। এ ছাড়া বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের জন্য আছেন সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পরিক্ষা-নিরীক্ষার আগে তারা গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চান নি।

ঢাকার ওই টিমের পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ওই দুই সন্তানের বাবা-মায়ের গতকাল (রোববার) জ্বর ছিল। আল্লাহর রহমতে আজকে আর জ্বর নেই। যেহেতু কোনো ভাইরাস এখনও শনাক্ত করা যায় নি। তারা সুস্থ আছেন। একারণে হাসপাতালে আইসোলেশনে না রেখে নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের-পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.এফ.এম শামীম আহাম্মদ বলেন, নিহত ২ শিশু ও তার মা-বাবা আসলে কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত কি না?

বা দুই শিশুর মৃত্যুর কারণটা কি তা শনাক্তে ঢাকা থেকে টিম এসেছে। তারা সোমবার সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছেন। হাসপাতালে ওই রোগীদের যাবতীয় রিপোর্ট তারা দেখেছেন। যে চিকিৎসকদের অধীনে ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনাও পুনরায় পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আইইডিসিআর’র প্রতিনিধি টিম যাবতীয় তথ্য, নমুনা সংগ্রহ করছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। আশা করছি শীঘ্রই মৃত্যুর কারণ বের হয়ে আসবে।

এরআগে, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ চত্বরে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন তাদের গৃহকর্মী। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরদিন বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে। এ সময় তারা বার বার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন।

মাইক্রোবাসে মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরের অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার। আর শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাশিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পরে তাকে রাজশাহী সি.এম.এইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে মাশিয়ার পুরো শরীরেও ছোপ-ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সি.এম.এইচে’র চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকেলে মারা যায়। শনিবার বিকেলে নিকট
স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। সেখানে গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুদের বাবা-মাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ