শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ শাসনামলের সহযোগী- এমন অতীত ভূমিকার জন্য সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে জাতীয় পার্টির ডাক পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
যাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক জাতীয় পার্টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেইসবুক পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি সামনে এসেছে।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংলাপে ডাক পাওয়া, না পাওয়ার বিষয়টিকে ধর্তব্যে নিচ্ছেন না।
তার ভাষ্য, ডাকা না ডাকা, সরকারের বিষয়। তারা তাদের মতো করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ সোমবার মধ্যরাতে নিজ নিজ ফেইসবুক পেজে জাতীয় পার্টি নিয়ে পোস্ট দেন।
তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল জাপা।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ করছেন। গত শনিবার প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদসহ পাঁচটি দল এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ তিনটি জোট।
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা কখনো মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন। কখনো সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর জাতীয় পার্টির অতীত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এবার প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও জাতীয় পার্টির সেই অতীত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ড. ইউনূস ৮ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩১ অগাস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একবার আলোচনা করেছিলেন। তখন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ কয়েকজন নেতা অংশ নিয়েছিলেন। এবার সংলাপে দলটিকে নিয়ে ছাত্রনেতৃত্বের আপত্তির কারণে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সোমবার রাতে ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।”
আরেকজন সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম লিখেছেন, “জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালালদেরকে প্রধান উপদেষ্টা কিভাবে আলোচনায় ডাকে?”
দুই সমন্বয়কের এমন পোস্টের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ যদি এমন কথা বলতে চায়, তাহলে বলতেই পারে। কিন্তু মাঠে এভাবে বলে লাভ নাই। আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা আমাদের মতো করে উত্তর দিব। এটার পক্ষে-বিপক্ষে দুইটাতেই যুক্তি আছে।
“আমরা শেষ সংলাপে ডাক পেয়েছিলাম। তখন পাঁচজন গিয়ে মিটিং করছি। এবার যে সংলাপ হবে সেটার ডাক এখনও পাই নাই। উনারা প্রয়োজন মনে করলে ডাকবে, আর প্রয়োজন মনে না করলে ডাকবে না। এটা উনাদের বিষয়। আমরা এটার জন্য বসে নেই, আমাদের রাজনীতি যেটা, আমরা করব। আমরা একটা বৃহৎ ও পুরনো রাজনৈতিক দল, আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা করব।”
বিগত সরকারের সময় কোন ধরনের পরিস্থিতিতে জাতীয় পাটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তাও ব্যাখ্যা করেন চুন্নু।
তিনি বলেন, “২০০৮ সালে সকল দল নির্বাচনে এসেছে। ২০১৪ সালে আমাদের নেতা নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপর একটা পর্যায়ে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। তখন উপজেলাসহ বিভিন্ন নির্বাচন হয় সেখানে কিন্তু বড় বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে।
“২০১৮ সালে আমরা যেমন পার্লামেন্টে ছিলাম তেমন বিএনপিসহ বিভিন্ন দল কিন্তু চার বছর পার্লামেন্টে ছিল। এরপর ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করে। আমরা কী অবস্থায় নির্বাচনে এসেছি তা আমাদের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট করেছেন। মূলত জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছে।”
এর আগে সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের অভিযোগ করেন, একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি দাবি করেন ছাত্রদের আন্দোলনে জাতীয় পার্টি শুরু থেকে সমর্থন দিয়েছে।
কাদের বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে।”
ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রতিবাদও করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়েছি। জাতীয় পার্টি যৌথসভা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সর্বতভাবে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
তিনি বলেছেন, “১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে আমি ৩ জুলাই সংসদে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেছি। বক্তৃতায় আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থি, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ