দুর্গাপুরে অযত্নে হিমাগারে আলু পচন, লোকসান গুণছে চাষি-ব্যবসায়ীরা

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬, ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এসএম শাহাজামাল, দুর্গাপুর
দুর্গাপুরের হিমাগারে আলু রাখেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। লাভের আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা গত আলু মৌসমে বীজসহ বাজার জাতকৃত আলু সংরক্ষণ করেন। যা চলতি মৌসমে বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বীজ রোপণ করা হবে। হিমাগারে সংরক্ষিত আলুগুলো কর্তৃপক্ষের অযতœ ও অবহেলার কারণে পচন ধরছে।
এদিকে দাম কমের কারণে হতাশ আলু ব্যবসায়ী ও চাষীরা। বাজারে আলুর দাম না থাকায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। লাখ লাখ বস্তা আলু পড়ে আছে হিমাগারে। গতবারের চেয়ে প্রতিটি হিমাগারে প্রায় ১৫ হাজার বস্তা কম আলু বেরিয়েছে। আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের বিষয়টি মানতে নারাজ হিমাগার কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন হিমাগারে এখনো অর্ধেকের বেশি আলু রয়েছে। আর হাতে আছে মাত্র দুই মাস সময়। ব্যবসায়ী ও কৃষক তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে আছে। হিমাগারগুলো আলু নেয়ার কোনো ব্যবসায়ী নেই। এমনকি তারা বাহিরে বাজারে ও এ আলু বিক্রয় করতে পারছেন না। জমি থেকে উঠানোর পর একটু লাভের আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন। কিন্তু এবার তাদের সে আশা পূরণে ভেস্তে দিলো দামে। দিন দিন বাজারে আলুর দাম কমছেই। পাশাপাশি বাড়ছে হিমাগারের ভাড়ার পরিমাণ। দাম আরো কমার আশঙ্কায় হিমাগার মালিকরা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু তুলে নেয়ার তাগিদ দিচ্ছে। এতে আরো হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক চাষিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, মুনাফার টোপ দিয়ে হিমাগার কর্তৃপক্ষ চালু চাষে উদ্বুদ্ধ করেন কৃষকদের। লাভ হলে ভালো, লোকসান হলে সুদে আদায় করে থাকেন ঋণের পাওনা। ফাঁকা স্ট্যাম্পে ¯^াক্ষর নিয়ে হিমাগার কর্তৃপক্ষ টাকা ও বীজ দিয়ে থাকেন। হাজার বস্তা আলু থাকলেও ব্যবসায়ী-কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষের কোন চুক্তিনামা হয় না। একটা গেটপাস চিরকুটই হাজার বস্তা আলুর একমাত্র প্রমান। সরকারের দেখা উচিৎ যে আলু পচে ও ওজন কমে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় সাড়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার বস্তা আলু রাখা যায় উপজেলার দুই হিমাগারে। গতবারে এ সময় যে পরিমান আলু বিক্রি হয়েছিল এবারে তার প্রায় অর্ধেকেরও কম আলু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ হাজার  টন বীজ আলু আর বাকিটা খাওয়ার আলু। আগামী দু’মাস খাওয়ার পরও অনেক বস্তা টন আলু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হিমাগারগুলো থেকে যদি প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার বস্তা আলু বাজারে নেয়া হয় তাহলে হিমাগারগুলো নতুন মৌসুমের আগে খালি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু হিমাগারগুলো থেকে বর্তমানে দৈনিক বিক্রি হচ্ছে এরচেয়ে অনেক কম বস্তা আলু। এতে অনেক বস্তা আলুই অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই শুরু হবে আলুর নতুন মৌসুম। এ পরিস্থিতিতে শুধু অবিক্রিত থাকা নয়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি, পচে যাওয়া, ব্যাংকের ঋণের সুদসহ নানা খরচ হিসাব করলে লোকসানের অঙ্কই ভারী।
আলুর নতুন মৌসুম শুরু হতে মাত্র ২ মাস বাকি। বাজারে নতুন আলু এলে পুরনো আলুর কদর থাকবে না। অথচ এখনো হিমাগারগুলোতে লাখ লাখ আলু পড়ে আছে। কৃষকরা এবার আলুর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আগামী বছর উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বর্তমান আলুর বাজার দরে লোকসানের মুখে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান দামে আলু বিক্রি করলে ৮৫ কেজির প্রতি বস্তায় লোকসান গুণতে হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। দুইদিন আগে প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকায়। জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে আলুর নতুন মৌসুম শুরুর আগেই মজুদ আলু বিক্রি শেষ করতে সরকারের দুয়ারে ধর্ণা দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাষিরা আলুর মারপ্যাচ বুঝতে না পারলেও লোকসান হচ্ছে এ আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
দেবীপুরের আলুচাষি আবদুল আওয়াল বলেন, আলুর কমদামে অনেকটা ফিকে যাচ্ছে চাষিদের। হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন সরকার কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, টেস্ট রিলিফসহ অন্যান্য খাতে যেন চাল ও গমের পাশাপাশি আলুও সরবরাহ করে।
হিমাগারের আলুতে পচন ধরেছে। হিমাগারে আলু পচন ও গাছ গজানো বিষয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগারগুলোতে সঠিক পরিচর্যা ও অব্যবস্থাপনার কারণে পচন ধরে। শুধু খাবারের আলু নয় এসব আলুর মধ্যে বীজের আলুও রয়েছে। বীজের আলুতে পচন ধরলে প্রান্তিক কৃষকরা আগামীতে আলুচাষ করতে পারবেন না।
এদিকে হঠাৎ করে নি¤œচাপের কারণে দুর্গাপুরের প্রতন্ত অঞ্চল থেকে কাচা সব্জি ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করতে পারছে না। যার ফলে আরো বেশি আশঙ্কা পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তবে হিমাগার কর্তৃপক্ষ দাবি করতে বাজারে দাম কম। কিন্তু হিমাগারে আলু থাকবে না। যদি কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন আলু বাজারে বিক্রি করেন। তবে দামের কারণেই আলু বিক্রিতে অনিহা এসেছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিমাগারের মহাব্যবস্থাপক বলেন, গতবারও এসময়ে আলুর দাম কম ছিল। অথচ শেষের দিকে প্রতিবস্তা আলু ২৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত না দেখে ঢালাওভাবে কারো দোষগুণ বিচার করা ঠিক নয়। তবে তিনি আলুতে পচন ধরার কথা ¯^ীকার করে বলেন, আমাদের কৃষক, ব্যবসায়ী ও কর্তৃপক্ষ অনেকেই সচেতন নয়। অনেকে মনে করেন আলু রাখলেই বেঁচে যান। ভেজা-শুকনা, মাটি লেগে আছে কিনা কিছুই বোঝে না। কর্তৃপক্ষের আলুর বস্তা খুলে দেখে নেয়ারও সুযোগ থাকে না। এসব বিভিন্ন কারণে আলুতে পচন ধরে। এবারো দু’একটি হিমাগারে তার ব্যতিক্রম হয় নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ