শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
এসএম শাহাজামাল, দুর্গাপুর
দুর্গাপুরে হঠাৎ করে আবার শীত জেঁকে বসায় আলুর আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে আলুতে আবার এ রোগ দেখা দেওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর আগেও একবার এ রোগ হওয়ায় অনেক আলু খেত নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শীতের শুরুতে আলু রোপণের ২০ থেকে ৩০ দিনের মাথায় আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে উজাড় হয়ে গেছে বিঘার পর বিঘা আলু খেত। এরপর আবার ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার হাজার হাজার বিঘা আলু খেত। আলুর বয়স এখন ৬৫দিন। এখন আলুর গাছ সতেজ ,শক্তিশালী ও রোগমুক্ত থাকতে হবে। তাহলে আলুর ফলন ভালো হবে। তা না হয়ে নতুন করে আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আলুর ফলন কম হবে বলে জানান কৃষকরা।
দুর্গাপুর উপজেলার আলু চাষি সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ আলুর খেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এবার আলুর ফলনের কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ আলু যখন জমিতে বড় হবে ঠিক এ মুহূর্তে এ রোগে নষ্ট করে গেছে। এখন আর আলু খেতের কোন বালাইনাশকও নেই। আলুর যখন ২০ থেকে ৩০দিন গাছের বয়স ছিল। তখন আলুর গাছে যে আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। সে সময় আলু চাষিদের হাজার হাজার বিঘা আলু খেত নষ্ট করে চলে গেছে। নষ্ট হওয়ার পরে চাষিদের যতটুকু ছিল তাই ভাল ভাবে যতœ নিয়ে ভাল ফলনের আশায় ছিলেন চাষিরা। কিন্তু চাষিদের এবার মাথায় হাত পড়েছে। শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে গেল আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইটে মতো রোগে। আর কোন বালাইনাশ ব্যবহার করে ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার বেশিভাগ আলু চাষির ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। সে কারণে এখন আলু চাষিরা চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আলু চাষি মিজান বলেন, গাছের বয়স ৭০ দিন হয়েছে। আরো ২০ দিন পরে আলু তোলার কথা। এর মধ্যেই গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। যে সমস্ত গাছ এখনও টিকে আছে সেগুলির পাতার নিচেও ছোটছোট পোকা বাসা বেঁধেছে। ওই পোকা পাতার রস শুষে নিচ্ছে। এক রাতে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকা নেই এমন গাছের গোড়াও পচে গিয়ে শুকিয়ে গিয়েছে। ইতোমধ্যে ওই চাষির ৪ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ওষুধ দিয়েও লাভ হচ্ছে না। আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগ কিছুতেই ঠেকাতে পারছি না।
একই দশা হয়েছে আবদুল মমিনের সাড়ে ৬ বিঘা, আবদুল আওয়ালের ৮ বিঘা, নাহিদের ৬ বিঘা, জিয়ার ৪ বিঘা আলু খেতের। তাঁদের খেতেও এ মারণ রোগ ছড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আলু বীজ রোপণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে চাষ ও সারের খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি আলু চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
আলুচাষি শাহাজামাল বলেন, ‘অন্তত উপজেলার চাষের অধেক জমির আলু নষ্ট হয়েছে। লোকসানের পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা মোখলেছুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়া জন্য উপজেলায় নতুন করে আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছে আলু খেত। এতে আলুর বয়স ৬০ দিন অতিবাহিত হওয়ায় কারণে আলুর ফলনের সম্ভাবনা কম হতে পারে বলে জানান। কিন্তু আলুর বয়সের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। কেন এ রোগে আক্রান্ত হলো তা বুঝতে পারছি না। তবে নতুন করে কোন বালাইনাশক আলুতে ব্যবহার করার সময়ও নেই। কিন্তু তিনি এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন।
উপজেলার কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার প্রায় উপশি ২১ শত হেক্টর জমিতে ও স্থানীয় ৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। পুরো উপজেলায় বেশি ভাগ আলু খেতে এ রোগ ছড়িয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকতা বিমল প্রামানিক বলেন, বর্তমানে দুর্গাপুর উপজেলায় আর্লি ব্লাইট ও লেট ব্লাইট রোগে তেমন আক্রান্ত নেই। দু’একটি গ্রামে ছিটে ফোটা রয়েছে তাও তাপমাত্রার আদ্রতার বাড়ার কারণে। এতে আলুর ফলনের কোন ক্ষতি করবে না। দুর্গাপুর উপজেলায় রাইজট্রনিক্স নামের একটি রোগ রয়েছে তা এ উপজেলায় ছড়িয়েছে। এ রোগে আলুর ক্ষতি করতে পারে।