দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে সুখের স্বপ্ন নীড়ে ৩১২ ভূমিহীন পরিবার

আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ৬:১৫ অপরাহ্ণ


এস এম শাহাজামাল, দুর্গাপুর :


দুর্গাপুর পৌর বাজার থেকে উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার পিচঢালা পথ পেরোলে পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড দেবীপুর, উপজেলার দেবীপুর গ্রামে আশ্রয়নে সারি সারি রঙিন ঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাকা এ ঘরগুলোর টিনের চালা যেন ‘লাল-সবুজের’ পতাকা। এর এক পাশে রয়েছে পিচঢালা পথ ঘেষে বারণয় নদীর বৃহৎ আকারের খাল আর অপর পাশে সবুজের সমাহার।

সবুজের সমাহোরে সামনের বাড়িগুলোর শোভা পাচ্ছে নানারকম শাক-সবজির সবুজের সমারোহ। রঙিন টিনের আধাপাকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খণ্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন এক দল নারী-পুরুষ।

খাল ও সড়কের গাঁ ঘেঁষে গড়ে ওঠা আশ্রয়ন প্রকল্পের এই পল্লীতে এ উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের শান্তির বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩১২। জনসংখ্যার হিসাবে এখানে শতাধিক নারী-পুরুষের বসতি। তাদের জীবনের শুরুটা ভূমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়। প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের শান্তির বসবাস জন্য শুধু ঘর নয় নিজ নামে জমি লিখে দিয়েছেন।

এতে তারা হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়নে বসবাসরত অর্ধশত ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। দেবীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের তিন থেকে সাড়ে চার শত গজের মধ্যেই মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থান। ফলে এ আশ্রয়নে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়নের উন্নয়নও ঘটেছে।

সরেজমিনে দেবীপুর আশ্রয়নে গিয়ে দেখা যায়, মৃদুমন্দ বাতাসে সবুজের সমাহোরের পাশে ঘরের আঙিনার নানান সবজির বাগান। মাচায় লকলকিয়ে বাড়ছে সিম আর লাউ, নিচের গাছে ঝুলছে ছোট ছোট বেগুন ও লাল-সবুজ টমেটো। এক কোণে পালং ও লালশাকও মাটি ফুঁড়ে উঠেছে ইঞ্চি দুয়েক। রয়েছে পেপে, কলাসহ শীতকালীণ নানা সবজি। গাছে গাছে আমের মুকুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন।

আশ্রয়নে নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ পল্লীকে সমৃদ্ধ করছে। এর পাশেই সুবাস ছড়াচ্ছে গাছের বাহারী রঙিন ফুল।
রয়েছে হাস-মুরগি আর গবাদী পশু পালনের সুব্যবস্থা। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলে কাজ নিয়ে আর নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে।

আবার কেউবা ব্যস্ত সময় পার করছেন সেলাইয়ের কাজে। এককথায় ছোট পরিসরে আদর্শ রঙিন ছিমছাম সারি সারি ঘর। আর সেই সুখনিলয়ের আঙিনায় সবজি খেতে কাজ করছিলেন মুনজুয়ারা বেগম (৫০) নামের এক নারী। ২০ বছর আগে একমাত্র ছেলে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে নিয়ে তিনি দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন থেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে তেঁতুলতোলায় আসেন। পৌর বাজারের ৬নং ওয়ার্ডে রাস্তার পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় বসবাস করে এলজিডি’র রাস্তার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

জমিসহ সুন্দর পাকা ঘর করে দেওয়ায় মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন তিনি। আরেক বাসিন্দা আমিনুলের স্ত্রী বেদেনা (৩২) জানান, এর আগে তারা মাড়িয়া ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামে মানুষের বাড়িতে থাকতেন। মনোরম পরিবেশে জমিসহ রঙিন পাকা ঘর পেয়ে তারা আবেগআপ্লুত।

হালিমা (৩০) জানান, এর আগে তারা পৌর বাজারের ৬নং ওয়ার্ডে বসবাস করতেন। পিঠা বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আরো এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো,শুধু জমিসহ ঘরই নয় ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগ,রান্না ঘর,স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমাদের জীবনকে মধুময় করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

রছুমা (৫৫) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আগে আমরা ছোট ভাঙ্গা ঘরে থেকে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেয়ায় এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আগের মত কষ্ট আর নেই।

তিনি আরো জানান,দু’শতক জমিসহ ঘর পেয়ে তিনি উচ্ছ¡সিত। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা আমাকে মাথা গোঁজার ঠাই দিয়েছে। এ শান্তির নীড় গড়ে দেওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই তাঁকে যেন একশ’ বছর সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রেখে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে রাখেন।

এভাবেই উপজেলার সুখের পল্লীতে সুখে আছেন ৩১২টি পরিবারের শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধসহ নারী-পুরুষ। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহীত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অসহায় ভিক্ষুকরাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই ঘর। এসব প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে মিলেমিশে আছে। দিন যতই যাচ্ছে একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গীও হচ্ছে। এ যেন সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গৃহহীন-ভূমিহীনরা স্বপ্নের এ পাকা ঘর পেয়েছেন। এতে করে এই অসহায় মানুষগুলোর জীবন বদলে গেছে। এই মানুষগুলোর একসময় ছিলোনা নিজস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে আবার কেউ স্বল্প টাকার ভাড়া বাসায় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এই ঘর অনাবিল হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। নিজের একটি পাকা-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাদের মনোরম পরিবেশে নিরাপদ ও মজবুত স্থায়ী ঘর পেয়ে।

সরেজমিনে এসব ঘরে বাস করা মানুষদের দেখা যায়, মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাবন করছেন।

এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সোহেল রানা বলেন, ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবেনা’- মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলার দেবীপুর আশ্রয়ণসহ উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১২টি পরিবারের জন্য রঙিন পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল ভূমি ও গৃহহীন সবাইকে ঘর দেওয়া হবে। আশ্রয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ