সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
এস এম শাহাজামাল,দুর্গাপুর:
আসন্ন দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রবীণ প্রার্থীরা কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ছেন। ক্ষমতাসীন আ’লীগ এবার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় দলের একসময়ের ত্যাগী ছাত্রনেতারা নির্বাচনে মাঠ কাঁপানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও ক্ষমতাশীন দলের নবীন প্রবীণের অংশগ্রহণে জমজমাট নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, এবার বয়সে তরুণ এবং ভোটের মাঠে নতুন মুখ প্রবীণ প্রার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকেও কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিভিন্ন বাজার ঘাট, অনুষ্ঠান, ধর্মসভা, মসজিদ-মন্দিরে অংশ নিচ্ছেন নেতারা। এতে তাঁরা প্রবীণ প্রার্থীদের নির্বাচনী সরল অঙ্কে গরমিল পাকাতে পারেন বলে ধারণা করছেন নেতারা।
তবে এবার প্রবীণদের সরল অঙ্কে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নবীনরা। আর সেই সরল অঙ্ককে টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত প্রবীণ নেতারা। এবার দুর্গাপুরে নবীন ঠেকাতে প্রবীণ দুই নেতা বেঁধেছে জোট। কোনোভাবেই মাঠ ছাড়তে নারাজ প্রবীণরা। এদিকে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে নবীন নেতারাও। তারাও এবার বেধেছে জোট কোনোভাবেই প্রবীণদের সরল অঙ্কে ছাড় দিতে নারাজ।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দুর্গাপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণের তারিখ তৃতীয় ধাপের ২১মে। তবে ভোটগ্রহণের সময়ের ব্যবধান খুব বেশি নয়। ফলে উপজেলাজুড়ে নির্বাচনী মাঠে নেতাকর্মীদের জোর প্রস্তুতি চলছে। নবীনরা নির্বাচনমুখী হওয়ার কারণে পরিবেশ জমে উঠেছে।
মাঠের কর্মীরা বলছেন, তাঁরা শুধু অভিজ্ঞতায় মজে থাকতে চান না, তাঁরা সব সময় পরিবর্তন এবং তরুণ ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের পক্ষে। সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মাঠকর্মীদের সংযোগ থাকে প্রতিনিয়ত। এবার দুর্গাপুর উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল মজিদ সরদার এবং পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শরিফুজ্জামান শরিফ।
উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন আ’লীগের এই প্রবীণ নেতা।
অপরদিকে, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ সরদার। পরের দু’দফায় তিনি দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমর্থন কোনোটাই পাননি। দলীয় সমর্থন না পেয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে, দুই প্রবীণ নেতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবার নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শরিফুজ্জামান শরিফ। আ’লীগের এই উদীয়মান নেতা এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, যেহেতু নির্বাচনে দলের প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, সে কারণে প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আটকানোর উপায় নেই। নেতৃত্ব আসলে বয়স দিয়ে বোঝা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকে চল্লিশের কোঠায় রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। ফলে কে জনপ্রতিনিধি হবেন, সেটা তাঁর যোগ্যতা ও পারিপার্শ্বিক নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।