দুস্থদের চাল নিয়ে অনিয়ম ।। কাল বিলম্ব না করে কঠোর ব্যবস্থা নিন

আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০১৬, ১১:৩২ অপরাহ্ণ

দেশব্যাপি দুস্থদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এর ফলে সরকারের একটি গঠনমূলক কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে, দুস্থদের চাল নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। রাজশাহীতেও এই চাল বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি দৈনিক সোনার দেশসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে টিপসই এবং স্বাক্ষর জাল করে দশ টাকার চাল বিতরণে অভিনব জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেয়ার চারদিন পরও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এক মাসের চাল দিয়ে দুই মাসের টিপসই ও স্বাক্ষর নেয়ার প্রমাণ মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে। নিরক্ষর হতদরিদ্র আদিবাসী পল্লীগুলোতেই বেশি ঘটেছে এই নজিরবিহীন জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, হতদরিদ্রদের চাল বাইরে বেশি মূল্যে বিক্রি করে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা।  দুর্গাপুর উপজেলাতেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানানগর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তার আত্মীয় ও স্বচ্ছলদের ১০ টাকা কেজির চাল দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই অভিযোগ দেশের বিভিন্ন স্থানেই হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের জানার মধ্যেও আছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষৎকারে খাদ্যমন্ত্রী বলেছে, “বিভিন্ন অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে। ডিলার নিয়োগের ব্যাপারে অভিযোগ আসছে। ডিলাররা চাল বণ্টন করার ব্যাপারে ওজনে কম দিচ্ছে এবং তালিকা তৈরি সঠিকভাবে হয়নি এমন অভিযোগ আসছে। অনেক হতদরিদ্রকে বাদ দিয়ে অবস্থাপন্ন যারা তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-এমন অভিযোগ আসছে”।
সন্দেহ নেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সরকারের একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফলে চ্যালেঞ্জটাও খুব বড় ধরনের। প্রথিবীর অনেক দেশ আছে যাদের মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখের কমÑ সেখানে বাংলাদেশে ওই পরিমাণ লোক বছরের পাঁচ মাস প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ১০ টাকা কেজি দরে বিতরণ করবে এটা অত্যন্ত সাহসী একটি পদক্ষেপ। এর সাফল্যের সাথে সরকারের ‘দরিদ্রবান্ধব’ ভাবমূর্তির বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এর সাফল্যই সার্বিকভাবে কাম্য। এই কর্মসূচি দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাই শুধু দিবে না তাদেরকে সক্ষমতা অর্জনেও সহায়ক হবে। এ কাজটি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ সমর্থনের প্রয়োজন আছে। সহযোগিতা না করে কোনো কোনো কর্মী যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তা হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে নির্দ্বিধায় বলা যায়। এতে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা, যে আস্থা তারও ক্ষতিসাধন হবে। অতএব দুস্থদের চাল নিয়ে যেই ছিনিমিনি করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই উপযুক্ত হবে। প্রথমেই কঠোর না হলে পরিস্থিতি নাগালের মধ্যে নাও থাকতে পারে। আমরা আশা করি  সরকারের কালবিলম্ব না করে অনিয়মের সাথে যারা জড়িত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা দুস্থদের চাল নয়ছয় করতে চায় তারা সর্বনি¤œ মানের মানুষ- তারা কোনোভাবে সহানুভূতির যোগ্য নয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ