দেড় কোটি জনসংখ্যার দেশে ৮৫০ ভাষা

আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২৪, ৫:৩১ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


আমাদের দেশে বাংলার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভাষার ব্যবহার রয়েছে। যদিও সেগুলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা। যা সেই গোষ্ঠীর বাইরে কেউ ব্যবহার করে না। এথ্নোলগ-এর ২১তম সংস্করণ (২০১৮) অনুসারে বাংলাদেশে ৪১টি ভাষা প্রচলিত আছে সবকটি ভাষাই জীবিত। তবে বাংলার প্রচলনই সবচেয়ে বেশি।

তবে বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে যেখানে জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ। কিন্তু তাদের ভাষা ৮৫০টি। অর্থাৎ ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কথা বলেন ৮৫০টি ভাষায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেই রয়েছে ২২টি ভাষার প্রচলন।

অবশ্য প্রায় দেড়শো কোটি মানুষের বাস রয়েছে যে দেশে, সেখানে বৈচিত্র্যের পরিমাণও যে বেশি হবে- সেটাই স্বাভাবিক। তবে মাত্র কয়েক লাখ মানুষ যেখানে বাস করে, সেখানে কয়েকশো ভাষার ব্যবহার নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো একটি বিষয়।

এই দেশটি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম একটি ছোট দেশ পাপুয়া নিউগিনি। ওশেনিয়ার ছোট একটি দেশ পাপুয়া নিউগিনির কথা। জনসংখ্যা কিংবা আয়তন, কোনো দিক থেকেই দেশটি ভারতের সমান বা কাছাকাছি নয়। মাত্র ৭.৬ মিলিয়ন বাসিন্দা নিয়েও এখানে ব্যবহৃত হয় ৮৫০টি ভাষা।

পুরো বিশ্বে ভাষার ক্ষেত্রে এরকম বৈচিত্র্যের দেখা মেলে শুধু এই দেশটিতেই। পাপুয়া নিউগিনিতে কীভাবে আসল এত ভাষার সমাহার? সেই দেশের বাসিন্দারাই বা কীভাবে এত বিচিত্র ভাষা আয়ত্ত করল, এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে।

পাপুয়া নিউগিনির পুরোনো ভাষাগুলোকে বলা হয় ‘পাপুয়ান’, যা আজ থেকে প্রায় ৪০ হ্যাজার বছর আগে সেখানে প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে সেখানকার জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ভাষা ‘পাপুয়ান’-এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এদের উৎপত্তির ভিত্তি কিন্তু এক নয়।
আসলে এই ভাষাগুলো আলাদা আলাদা কয়েক ডজন অসম্পর্কিত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এরকমও কিছু ভাষার সন্ধান এখানে পাওয়া যায়, যা কোনো পরিবারেরই অংশ না। এর শিকড় কোথায়, তা-ও জানা যায়নি।

আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বছর আগে, পাপুয়া নিউগিনিতে কয়েকটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষার আগমন ঘটে। এগুলো দেশটিতে এর পূর্বে প্রচলিত ভাষার তুলনায় ভিন্ন ছিল এবং হয়ত সেগুলো একটি মাত্র উৎস থেকেই এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উৎসটি তাইওয়ানীয় ছিল।

এত বৈচিত্র্যময় ভাষার সমাহারের ধকল সামলাতে না সামলাতেই দেশটিতে নতুন করে আরও ভাষার আগমন ঘটলো উনিশ শতকের দিকে। এই সময় সেখানে ইংরেজ এবং জার্মানভাষীদের আগমন ঘটে এবং দেশটি শাসন করা শুরু করে। স্বাধীনতার পর এত ভাষার মধ্যে পাপুয়া নিউগিনি শুধু তিনটি ভাষাকেই সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়।

এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে টোক পিসিন। এটি একটি ইংরেজি-ভিত্তিক ক্রেওল ভাষা। পাপুয়া নিউগিনিতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা এবং সেই দেশে এটি সার্বজনীন ভাষা হিসেবে পরিচিত। ক্রেওল হলো ইউরোপীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের সংমিশ্রিত জাতিবিশেষ। এরপরেই বেশ গুরুত্ব সহকারে অবস্থান করছে হিরি মোতু এবং ইংরেজি। হিরি মোতু একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা।

অস্ট্রোনেশীয় ভাষাগুলো মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মাদাগাস্কার এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই ভাষা পরিবারে হিরি মোতুসহ মোট ১ হাজার ২৫৭টি ভাষা রয়েছে। ব্যবহারকারীদের সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ ভাষা পরিবার। আর ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ভাষার সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বে দ্বিতীয়।

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষীর মানুষ এই পাপুয়া নিউ গিনিতে বসবাস করেন। পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসী জনসংখ্যা বিশ্বের অন্যতম ভিন্নধর্মী। পাপুয়া নিউ গিনির কয়েক হাজার আলাদা সম্প্রদায় রয়েছে, যার বেশিরভাগই মাত্র কয়েকশ লোক। ভাষা, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য সবই আলাদা।

পাপুয়া নিউ গিনির অনেক জায়গা জঙ্গলে ঘেরা। প্রাকৃতিক দৃশ্য অতুলনীয়। ফলে এখানে সারাবছর নানা দেশের পর্যটকের ভিড় জমে। এখানকার বেশিরভাগ আদিবাসী এখনো এসব জঙ্গলে বসবাস করে। তারা এখনো আদিম মানুষের মতোই জীবনযাপন করে। মাছ ধরা , বন জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করে এদের জীবন চলে।
তথ্যসূত্র: হিস্টোরি ডটকম, জাগোনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ