দেড় যুগ পর রাজশাহী কলেজে প্রকাশ্যে ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা উৎসব

আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ৯:১৩ অপরাহ্ণ

মাহাবুল ইসলাম


ছাত্র। বইয়ের সঙ্গে যার থাকার কথা নিবিড় আত্মিক সর্ম্পক। কিন্তু ছাত্র শব্দের পরে রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দলের নামযুক্ত হলেই একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় অনেকের মাঝে। বিশেষত সাধারণ ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতিকে খুব একটা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন না। গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চর্চা হয়েছে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে নানা বির্তককে ছাপিয়ে প্রকাশনা উৎসবের মতো কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে কলেজ ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। যা অনেকাংশেই সফলতার মুখ দেখছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রায় দেড় যুগ পরে রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে প্রকাশনা উৎসব দিয়ে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে ছাত্রশিবির। যেখানে উৎসুক শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকছে বেশ ভালোই। ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার এই আয়োজন ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আগামী দিনে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করছেন।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানে রাজশাহীর দুই শহিদ সাকিব আনজুম ও আলী রায়হানের স্মরণে প্রকাশনা উৎসবের দুইটি গেটের নামকরণ করা হয়েছে। আর স্টলে ছোট-বড় তিন ধরনের ডায়েরি, জুলাই বিপ্লবের তিন পৃষ্ঠার ক্যালেন্ডার, বড় ও ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক, ক্যারিয়ার বিষয়ক, গবেষণামূলক ও বিভিন্ন ইসলামি বইসহ ছাত্রশিবিরের অন্যান্য প্রকাশনা সামগ্রী সাজানো রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব প্রকাশনা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ স্টলে বসে বই পড়ছেন। সুসজ্জিত ও দৃষ্টিনন্দন লাইটিংয়ে এক ধরনের উৎসবের আমেজও তৈরি হয়েছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বন্ধুবান্ধবসহ ভিড়ও জমাচ্ছেন।

তবে কোন ছাত্র সংগঠন এমন আয়োজন করছে এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য বিষয়ও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে পূর্বে যে ছাত্র সংগঠনগুলোকে দেখেছি তারা বই নিয়ে এমন আয়োজন কখনো করেছে বলে আমাদের মনে নেই। বরং মিছিল-মিটিং আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে যা করা লাগে তার সব উদাহরণই আগে দেখেছি। এমনকি ছাত্র-শিবিরও ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করার পরেও তারা ব্যানার টাঙিয়েছিলো। তবে সমালোচনার মুখে তারা সেটি সরিয়ে ফেলে। আর এখন বই নিয়ে যে ব্যতিক্রমি আয়োজন তা আগামী ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে আশাব্যাঞ্জক।

রাজশাহী কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, এখানে ধর্মীয় বইসহ ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন বই রয়েছে। গবেষণাধর্মী বই রয়েছে। একটি ছাত্র সংগঠনের আয়োজন ভেবে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেয় নি। তবে তাদের বইয়ের কালেকশন দেখে প্রশংসা করেছি। ছাত্র সংগঠনগুলোর উচিত এমনই সৃজনশীল কর্মকাণ্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অঙ্কুশ সরকার বলেন, এখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। শিবিরের সংগঠনিক আদর্শের বাইরেও ইসলামি মূল্যবোধ, ক্যারিয়ার ও গবেষণাধর্মী সুন্দর সুন্দর বইয়ের কালেকশন রয়েছে। আমার ভালো লেগেছে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আসলে আমার ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই ছাত্ররাজনীতির নোংরা চেহারাটা দেখেছি। ছাত্রলীগের পেটুয়া রাজনীতি দেখেছি। একারণে ছাত্র রাজনীতি ভালোলাগে না। আর টেলিভিশন-পত্রিকায় তো ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই জেনেছি। তবে এখন তাদের আসল চেহারাটা দেখার সুযোগ পাচ্ছি। সেখানে আমার মনে হয়েছে, ক্যাম্পাসে যদি ছাত্র সংগঠনগুলোকে থাকতেই হয়; তবে এমন সৃজনশীল কাজ দিয়ে থাকতে হবে। লাঠিয়াল বাহিনীর প্রতিযোগিতা আমরা চাই না। এমন সৃজনশীল কর্মকাণ্ড চাই। যার দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারবে।

এ বিষয়ে কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. শিখা সরকার বলেন, তাদের বই উৎসবে আলী রায়হান নামে একটি গেট করা হয়েছে। এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আসলে প্রকাশনার বিষয়টি প্রশংসনীয় এবং বই মানুষকে আলোকিত করে। তাই প্রকাশনা উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন লেখকের বই মানুষের হাতে তুলে দেওয়া একটি মহৎ কাজ।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান মাহমুদ জানান, রাজশাহী কলেজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমাদের এই বই উৎসবটি মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য। ইসলামী ছাত্রশিবির একটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। আমাদের ২০০টির অধিক প্রকাশনা রয়েছে। আমরা বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠন। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমাদের নিয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে। আর ছাত্রলীগের দমন-পীড়নের কারণেই এতোদিন প্রকাশ্যে এমন উৎসবের আয়োজন করতে পারি নি। তবে ৫ আগস্টের পর আমরা আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক কর্মকাণ্ডের চিত্র নিয়েই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে এই প্রকাশনা উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. মাওলানা কেরামত আলী। আগামীকাল বুধবার পাঁচ দিনব্যাপি এই উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ