দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের শুরু আজ

আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২৩, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। শুক্রবার মহাষষ্ঠীতে দুর্গা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনের এ উৎসব শুরু হবে। এবার দেবী কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাবেন নৌকায় করে। এবার বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ।

ঢাকের বাদ্য, চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে মন্দির ও মণ্ডপগুলো। সকালে বেলগাছতলে (বিল্ববৃক্ষ) দেবীর আবাহন, সংকল্প ও ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর ঘুম ভাঙিয়ে পূজার্চনায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে দেবীকে বরণ করা হবে।

শনিবার হবে মহাসপ্তমী বিহিতপূজা। এরপর রোববার মহাঅষ্টমী, সোমবার মহানবমী ও মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
দুর্গাপূজা উদযাপনে পাঁচ দিনব্যাপী আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ হবে। এ ছাড়া মহাঅষ্টমীর দিনে অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা ও বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রার আয়োজন থাকছে। ইতিমধ্যে পূজামণ্ডপগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন । দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাঁকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পূরাণ মতে দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগরী মিলে ৪৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে জেলায় ৩৮৯টি ও নগরে ৭৯টি মণ্ডপে এই পূজা হবে। আগের তুলনায় এবার মহানগরে দুর্গাপুজার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল মণ্ডপের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। আশা করছি, এবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে। এ জন্য সকলের উদ্দেশ্যে ২৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।

এদিকে মহানগরীর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মণ্ডপে বাহারি সব রং আর কাঠ-কাপড়ের ফ্রেমের কারুকাজ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। রং-বেরংয়ের আলোর ছটা সৌন্দর্যের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাঁশ বেঁধে আগত নারী-পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক স্থান তৈরি করা হয়েছে। জমকালো দুর্গাপূজার মধ্যে টাইগার মণ্ডপ অন্যতম। এবারও সেখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। প্যান্ডেল থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জা ও আলোক ছটাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন কারুকাজ ও নানা রঙে প্রতিমাগুলোকে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের মোহনীয় রূপ নজর কাড়ছে। পূজা প্রাঙ্গণ ও রাস্তার দুই ধারের পুরোটা রঙিন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অ্যাড. শরৎ চন্দ্র সরকার বলেন, পূজাসব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সাথেও আমাদের বৈঠক হয়েছে। তারা নিরাপত্তায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে আশ্বাস দিয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version