সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সম্ভাবনার পথেই হাঁটতে হবে
বাংলাদেশের অর্থনীতি আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে তিন দফায় ডলারের দর কমেছে এক টাকা। অর্থাৎ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের টাকার মান বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে। সংস্থাটি মনে করছে, আগামীতে মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানের তুলনায় কমবে। সেইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকও আশা করছে-চলতি ডিসেম্বরে রিজার্ভে যোগ হবে আইএমএফ’র দ্বিতীয় কিস্তির ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এমনই ইতিবাচক ধারণার তথ্য দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে রেমিট্যান্সসহ ডলার আসার প্রবাহ ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি দাতা সংস্থার ঋণ বাড়ছে। একইসঙ্গে আগের তুলনায় ডলার খরচ কিছুটা হলেও কমেছে। ফলে শিগগিরই রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি অর্থনীতির গতি সঞ্চার হওয়া শুরু করবে।
বিশ্ব ব্যাংক তেমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে যে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (কেএনওএমএডি) এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, আগামী বছরও বাংলাদেশ একই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাবে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড ১২.৪৬ লাখ কর্মী বিদেশে গেছে। গত বছরে এ সংখ্যা ছিল ১১.৩৫ লাখ।
কর্মী রফতানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হলেও বিগত ২ পঞ্জিকাবর্ষে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই আটকে ছিলো।
বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী বছর উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা খুবই আশাব্যঞ্জক। এই দেশগুলো আবার বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকতে পারে। পাশাপাশি তেলের দাম কম হওয়ায় ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এর বিপক্ষ মতও আছে। এ মতের অনসারী অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘এটি নির্বাচনি প্রচারণার অংশ। নির্বাচনের আগে অর্থনীতি ভালো আছে-এই তথ্য বোঝানোর জন্যই ডলারের দাম কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। এতে বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। কোনো পক্ষেরই উপকার হচ্ছে না।’ এ ধারণা এই অর্থে নাকচ হয়ে যায় যে, অর্থনীতির সম্ভাবনার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। বৈশ্বিক অর্থদাতা সংস্থা দুটি নিশ্চয় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। যাহোক, ইতিবাচক ধারণার সাথেই আমাদের থাকতে হবে, সেই সম্ভাবনাকেই আমাদের যুজতে হবে।