‘দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি’ || যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কুড়ান শেখ

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০১৬, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট



‘১৯৭১ সালের এই দিনে দেশব্যাপি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর ওপর চূড়ান্ত হামলা চালানো হয়। আবাল-বৃদ্ধ বনিতা দৃপ্ত প্রত্যয়ে গেরিলা হামলা শুরু করে। লক্ষ্য একটিই দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করা। সারাদেশ যেন কেঁপে ওঠে বিজয়ের প্রসব বেদনায়। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলার ফলে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।’
কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি আশ্রয় প্রকল্পে থাকা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কুড়ান শেখ। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের মাটি ও মানুষকে রক্ষায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই নয় মাস যুদ্ধে জয়ি হয়ে ৭০ বছর বয়সে তিন মেয়ে নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছেন।
কুড়ান শেখ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স তখন ২২ বছর। দেশের মা, মাটি ও মানুষের ডাকে যুদ্ধের সময় ঘরে বসে থাকতে পারেনি। পরিবারের লোকজনের কথা অমান্য করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি দেশের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকে। প্রতিরোধ যুদ্ধে স্থানীয় গাজি সাহেবের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করি। প্রথমে শরনার্থীদের সাথে ভারতে যাই। ভারতে গিয়ে ৭ নম্বর সেক্টরের ৪নং সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আব্দুল রশিদের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পদ্মা নদী পারাপারের দায়িত্ব নিই। শাহাপুর টাংগন এলাকায় হঠাৎ যুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে জুলাই মাসের ৩ তারিখে নৌকা থেকে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাইফুল ইসলাম নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন । ওই যুদ্ধে রাাজশাহী শহরের নান্নু ও আমি গুরুতর আহত আবস্থায় ভারতে মুর্শিদাবাদের সদর হাসপাতাল বহরামপুরে ভর্তি করা হয়। আমার তখন কোনো জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরিয়ে দেখি আমার বামহাত কেটে ফেলা হয়েছে। কারণ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মর্টার শেলের স্প্রিন্টার এসে হাতের ওপর পড়ে হাত উড়ে যায়। তখন থেকেই এক হাত কাটা নিয়েই দিন পার করতে হচ্ছে।