শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
দেশ এখন নির্বাচনমুখি। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশে নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে বস্তুত হরতালের ঘোষণা ছাপিয়ে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী হরতাল-অবরোধকারী দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচনের প্রতি সমর্থন পেতে শুরু করেছে। তার জের ধরে বিএনপির অভ্যন্তরে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বহিস্কার ও কারণ দর্শানোর মত সঘটনাও ঘটছে। দলটি আন্দোলনে আছে বটে তবে পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও রেখেছে। তারপরেও বিরোধীরা এখনও তাদের সরকার পতনের এক দফার প্রতি আস্থা রেখে আন্দোলন-সংগ্রামকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনি জোয়ারের মুখে সেই আন্দোলন কতটুকু যৌক্তিক পরিণতি লাভ করবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে।
এটা এই কারণে যে, বিরোধীরা আন্দোলনে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি যে, তারা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা কিংবা ঘোষিত নির্বাচন বন্ধ করতে সক্ষম হবে। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির কৌশলের খেলায় বিরোধীরা অনেক পিছনে পড়ে গেছে তা বলাই বাহুল্য। নির্বাচন প্রশ্নে তাদের এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারে (বিওয়াইএলসি) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সম্পর্কিত এক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। ওই জরিপ তথ্যে ৭২ শতাংশ তরুণ-তরুণী ভোট দেয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ৪২ শতাংশ তরুণ দেশের বাইরে চলে যেতে চান। সার্বিক পরিস্থিতি বলতে বোঝানো হয়েছে- সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা না পাওয়া, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ঘাটতি প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসলে ৮৫ শতাংশ যুবকই আবার দেশে ফিরে আসতে চান।
দেশে নির্বাচনমুখিনতা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য মোটেও ভাল পরিণতি বয়ে আনে না। বরং এই প্রবণতা একদিকে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, অপরদিকে রাজনৈতিক দলের জন্য আত্মহত্যার সামিল হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই এ ক্ষেত্রে বড় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। দলটির দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আছে। তারা জন্ম থেকে আজ অবধি কোনো নির্বাচন উপেক্ষা করেনি। তুঙ্গ আন্দোলন করেছে আবার নির্বাচনকেও আন্দোলনের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে সার্থকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে। কেননা শেষ বিবেচনায় এ দেশের মানুষের কাছে নির্বাচন উৎসবের অপর নাম। সাম্প্রতিক সময়ে ভোটার বিমুখ হয়েছে ভোটগ্রহণে অনুকূল পরিবেশের অভাবে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে ভোটাররা আবারো ভোটের মাঠ জমিয়ে তুলবে, তা বলাই যায়। নির্বাচন বিরোধীরা আন্দোলনের সঞ্চিত শক্তি নির্বাচনের মাঠে কাজে লাগতে পারলে সেখানে সাফল্য আসবেইÑ তা যতটুকুই হোক। সরকার হটানোর আন্দোলনে সাফল্য যে আসবে না তা আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার দুর্বলতা থেকেই প্রতীয়মান হয়েছে।