দেশের ২২ লাখ হতদরিদ্র এখন ব্যাংকের হিসাবধারী

আপডেট: আগস্ট ৩, ২০১৭, ১:২০ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


এক সময় যারা ব্যাংকের দুয়ারের আশেপাশে যেতে ভয় পেতেন, এখন তারাও ব্যাংকের হিসাবধারী। শুধু তাই নয়, ব্যাংকে তারা নিয়মিত লেনদেনও করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৭ জন হতদরিদ্র মানুষ এখন ব্যাংকের হিসাবধারী। কেবল হতদরিদ্রই নয়, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুসহ আর্থিকসেবা থেকে বঞ্চিত ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এখন ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৫ জন কৃষকও।
প্রসঙ্গত, বঞ্চিত এইসব মানুষদের ব্যাংকিং সেবায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মাত্র ১০ টাকায় কৃষকের হিসাব খুলতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনীতির মূল ধারায় আনার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে অতিদরিদ্র উপকারভোগী, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধাভোগী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যদের জন্যও ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংকগুলো হিসাব খোলার বিশেষ কার্যক্রম নেয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ বা কৃষি উপকরণ সহায়তার কার্ড নিয়ে যেকোনও সরকারি ব্যাংকে গিয়ে এ হিসাব খোলা যাবে। কোনও ব্যাংক এসব হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ কিংবা কোনও ধরনের চার্জ নিতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা কোনও দিনই ব্যাংকে আসতে পারতো না, আর্থিক সেবা থেকে যারা বঞ্চিত ছিল, তাদের ব্যাংকিং সেবায় নিয়ে আসা হয়েছে। দেশের নাগরিক হিসাবেও তারা বঞ্চিত ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক যেহেতু চলেই মানুষের টাকায়, সেহেতু ব্যাংকের উচিত মানুষকে বঞ্চিত না করা।’ আর্থিকসেবা থেকে বঞ্চিতদের কেবল অ্যাকাউন্ট হয়েছে এমন নয়, আর্থিকসেবা থেকে বঞ্চিত ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপকার পাচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ‘চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৭৫ জন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখন ২১ লাখ ৫৬ হাজার টাকাও বেশি পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সমাজের বিচ্ছিন্ন এই পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এই পথশিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করে। ব্যাংক তাদের পাশে দাঁড়ালে তারাও উদ্যোক্তা হয়ে দেশের উপকার লাগতে পারেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে কৃষকের দশ টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৫টি। এসব হিসাবে জমা হয়েছে ২২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর বাইরে ২৩ হাজার ৪৭৬ জন কৃষকের ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার তহবিলের ৫৭ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কৃষকসহ সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসার অংশ হিসাবে ১০টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষক যেন প্রয়োজনমতো লেনদেন করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে ৪৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৭৫ জনের। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে দুস্থদের পুনর্বসানের অনুদানের উপকারভোগী রয়েছেন ১ হাজার ২৬৫ জন। ফুড ও লাইভলি হুড সিকিউরিটি প্রকল্পে রয়েছেন ৬০ হাজার ৮৭৫ জন। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিক রয়েছেন ৯ হাজার ৭৩৪ জন। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক রয়েছেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন।-বাংলা ট্রিবিউন