রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
দেশে নারী নির্যাতন পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ-পরিসংখ্যার দিয়েই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিসিএস এ কথা বলছে। রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে নারী ‘নির্যাতন-২০১৫’ শীর্ষক হালনাগাদ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি ওই সংস্থাটি। প্রকাশিত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য সভ্য মানুষের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ- উৎকণ্ঠার কারণ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোন পর্যাযে নিজের স্বামীর মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের প্রতিবেদনে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীর হার ছিল ৮৭ শতাংশ। এ হিসেবে চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর নির্যাতন কমেছে। ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ২২ অগাস্ট সারা দেশে ২১ হাজার ৬৮৮ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, গত চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমলেও শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। ২০১৫ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারী বিবাহিত নারীদের ৫০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ২৭ শতাংশ বিবাহিত নারী। ২০১১ সালে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।
বিগত দুই দশক ধরে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং তাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি জাতীয়ভাবেই গুরুত্ব লাভ করে। সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও আইন প্রণয়ন নারীর অধিকার সুরক্ষায় অনেকটাই কার্যকর ভূমিকা রাখছে। জাতি হিসেবে আমরা এমন একটি বাঁক অতিক্রম করছি যেখানে নারী ক্রমশই বহির্মুখি হচ্ছে-সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা মেলে ধরছে। এটাকে পুরুতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় বড় ধরনের আঘাত। এ সময় আগ্রাসী পুরষদের ( যা এখনও গুরুত্বপূর্ণ অংশ) ক্ষুব্ধ আচরণ নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করতে পারে। তবে এ বাধা অতিক্রমের প্রচেষ্টায় নারী পুরুষের সমন্বিত উদ্যোগও মানবসভ্যতার জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
নারীর পরাধীনতাকে যে কোনো দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি। মানবসভ্যতা এবং উন্নয়ন অগ্রগতির স্বার্থেই নারীদের সমানাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যু।
নারী সমাজের মর্যাদা বৃদ্ধি শুধু ন্যায় বিচারের প্রশ্ন নয়- এটা একটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। বেইজিং ঘোষণার ২১ বছর পর আজ একবাক্যে এ কথা বলার সময় এসেছে যে, নারীর অগ্রগতি, মানব জাতির অগ্রগতি এবং মানব জাতির অগ্রগতি মানে নারীর অগ্রগতি।
আমরা বিশ্বাস করি যে, একটি একক রাষ্ট্র এবং সমষ্টিগতভাবে সফল রাষ্ট্র হিসাবে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সে গুলোর প্রত্যেকটির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী ও মেয়েশিশুদের অধিকার অস্বীকার করা হলে এবং তারা পিছিয়ে থাকলে দেশ স্থায়ী অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না।