বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই
২০১৩ ও ২০১৪ সালের আগুন সন্ত্রাস আবারো ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে নাশকতার বিভৎসতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাম হচ্ছে ‘দুর্বত্তরা’ এ সব নাশকতা চালাচ্ছে- কিন্তু সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে নাশকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তা হলে নাশকতা চালাচ্ছে কারা?
যেসব দল আন্দোলন করছে তারা নাকি অন্য কেউ। কিন্তু নাশকতার অভিযোগে যাদের ধরা হয়েছে তারা কিন্তু সকলেই বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মি। বিরোধীদের দাবি মতে অন্য কোনো পক্ষ যদি নাশকতা ঘটায়- তার দায়ও কি আন্দোলনকারীদের ওপর গিয়ে পড়ে না? কই এতো নাশকতামূলক ঘটনার পরেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে নতুন কোনো কৌশল লক্ষণীয় নয়। তা হলে আন্দোলনকারীরা নাশকতার দায় এড়াবে কেমনে?
২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত চারশতাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ১৬ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে যাত্রীবাহী ৫টি ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়েছে। এতে পাঁচ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও রেল স্টেশনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভয়ঙ্কর এই নাশকতায় চারজনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একটি বগি থেকে মা ও শিশুসহ ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এক নারী। অগ্নিকূপে পড়ে যেভাবে সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন, ঢাকা মেডিকেলের মর্গের বাইরে লাশবাহী সাদা ব্যাগেও একইভাবে রাখা ছিল তাদের লাশ। এই মর্মস্পর্শী হৃদয়বিদারক দৃশ্য সমগ্র দেশের মানুষকে ছুঁয়ে গেছে। এই কষ্ট, এই বেদনা প্রকাশ করার কোনোই ভাষা নেই।
ওই নাশকতায় একজন বিএনপি নেতাও ছিলেন। যে মা শিশুকে বুকে করে পুড়ে মারা গেলেন তারা তো কেউ রাজনীতি করতেন না। তা হলে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাদেরকে কেন হত্যা করা হচ্ছে? বিরোধী আন্দোলনের মাঝে সংঘটিত নাশকতা নিয়ে এমন অনেক ক্ষুব্ধ প্রশ্ন জমা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো উত্তর মিলছে না।
আন্দোলনকারীরা বারবার বলছেন, তাদের আন্দোলনের সাথে জনগণ আছে। জনগণই তাদের শক্তি। এই যে অন্তঃসারশূন্য মিথ্যাচার কোনো নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কি? দেশের মানুষ যদি আন্দোলনের পক্ষেই থাকবে তা হলে রাস্তায় রাস্তায় এতো যানজট হয় কেন, হাট-বাজারে এতো মানুষের সমাগম হচ্ছে কেন, দেশের কল-কারখানা, ব্যাংক-বিমা, অফিস-আদালত, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান চলছে কেন? এর উত্তর কি আন্দোলনকারীরা দিবে না? রাজনীতিতো দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
তা যদি দেশের মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় তা হলে তাকে কি রাজনীতি বলা যায়? দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃত গড়ে তোলার জন্য, রাজনীতিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় নেয়ার জন্য এ সব প্রশ্নের উত্তর খুবই জরুরি। দেশের মানুষের এ উত্তর পাওয়া তাদের অধিকারও।