সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
শিশুশ্রম ও শিশুদের উপর নির্যাতন নিয়ে এ দেশে কম কথা হয়নি, এখনও হচ্ছে। সভা-সেমিনারে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা, সুপারিশ হয়েছে। নানাবিধ তাগিদ এসেছে; সর্বোপরি শিশুশ্রম ও নির্যাতন বিরোধী আইন ও বিধান হয়েছে কিন্তু থেমে নেই শিশুশ্রম ও নির্যাতন। বরং পাল্লা দিয়ে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের পরিধি বাড়তেই আছে। শিশুদের এই পরিস্থিতি নিরসনের জোর আকুতি আছে। তবে শিশুদের প্রতি নির্যাতনের দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি তার অবসান করা সম্ভব হয়নি। আর এটা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় আইন ও বিধান শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
এডুকো বাংলাদেশের শিশু অধিকার ও কল্যাণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে শিশুর প্রতি করুণ চিত্রই ফুটে উঠেছে। তথ্যমতে, দেশে শিশু শ্রমে যুক্ত আছে অন্তত ৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু, যাদের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত রয়েছে। শিশুশ্রমে যুক্ত এসব শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার আশংকা আগের চেয়ে ৬ গুণ বেড়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবদন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ শিশুই পরিবারের মাধ্যমে শ্রমে যুক্ত হয়, যারা দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বা সপ্তাহে ১ হাজার টাকার মতো উপার্জন করে। ৪৯.৬ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৪০.৯ শতাংশ। এমনকি তাদের মধ্যে ৮.২ শতাংশ মেয়েই ১৫ বছরের আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রথা, পরিবারের সম্মান, শিক্ষার অভাব, এবং জাল কাগজপত্রের সাহায্যে গোপন বিয়ের সুযোগ হলো বাল্য বিয়ের মূল কারণগুলোর অন্যতম। প্রায় ৬৪.৬ শতাংশ শিশু অভিভাবকদের কাছ থেকে হালকা ও গুরুতর শাস্তির শিকার হয়, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবেও দেখা যায়। বিশেষ করে এসব শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়। পথশিশুদের অর্ধেক মাদক সরবরাহ চেইনে যুক্ত এবং ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি মাদক গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত, যা চুরি, হয়রানি, এবং নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়ায়।
শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধেই নিহিত আছে। যদিও বলা হয়, শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের সাথে দারিদ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এও বলা হয়, শিশু সুরক্ষার বিষয়টি পরিবার থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের উপর এ দুটি কারণের প্রভাব অনস্বীকার্য। কিন্তু শিশুদের প্রতি বাঙালির মনোজগতে যা ক্রিয়াশীল তা শিশু সুরক্ষার প্রধান অন্তরায় বলেই মনে হয়। দায়মুক্তির সংস্কার যা শিশুর প্রতি সেটা কঠিন কিংবা লঘু হোক- শাস্তি দেয়া যাবে। এই মানসিকতার পরিবর্তনটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটি মনস্তাত্বিক সমস্যা। শিশুকে নিয়ে অভিভাবকরে স্বপ্ন থাকলে সে ক্ষেত্রে দারিদ্রকেও জয় করা যায়। এমন দৃষ্টান্ত মোটেও কম নয়। পরিবারে স্বস্তি, সুখ ও সম্পর্কের শ্লথ সম্পর্ক মোটেও শিশুবান্ধব নয়। পরিবারকে পরিবার হয়ে ওঠার সুযোগ খুবই কম। সমাজের বিভেদ, বৈষম্যকেও প্রশ্ন করতে হবে, সমাধান দিতে হবে। এসব বিষয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।