নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। দিন যত যাচ্ছে প্রচারণা ততই বাড়ছে। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে হবে ভোটযুদ্ধ। হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও। আসনগুলোর বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের সমর্থকরা বলছেন, রাজশাহীর চারটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আর বাকি দুটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া মাহি) ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এই প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সংসদ-সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে পুনর্বাসন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং শিক্ষক পেটানো ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ১২ ডিসেম্বর তার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের এক কর্মীর লাশ উদ্ধারের পর তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। রাব্বানী দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তার প্রচুর কর্মী, সমর্থক এবং অনুসারী রয়েছে। এছাড়া চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। আখতারও ব্যাপক জনপ্রিয় এই এলাকায়। এই আসন থেকে এবার সাড়া ফেলেছেন বিএনএম প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। তিনিও প্রচার-প্রচারণায় অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে চতুর্থবারের ১৪ দলের মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এবার বাদশাকে ঠেকাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের একাংশ। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার পক্ষে আছেন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী। এছাড়াও এই আসনে শক্ত অবস্থানে আছেন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মহানগর সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী। তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মাঠে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক। বাগমারা উপজেলার নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৫ বছর সংসদ-সদস্য থাকায় এনামুল হক বাগমারার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সর্বহারা আর জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত বাগমারাকে তিনি শান্তির জনপদে পরিণত করেছেন। কিন্তু নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন সংসদ-সদস্য এনামুল। অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের তিনি আওয়ামী লীগে ঠাঁই দিয়েছেন।
আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন এনামুলের অনুসারীরা। দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা, তফশিল ঘোষণার পর থেকে কালাম তার বিরোধীদের কোণঠাসা করেছেন। দুই প্রার্থীরই দলে অসংখ্য সমর্থক রয়েছে। সব মিলিয়ে আসনটিতে সংসদ-সদস্য এনামুল ও কালামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার ১৫ বছরে বাঘা ও চারঘাটের বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ কারণে তার প্রতি সমর্থন বেড়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নির্বাচন করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহেনুল হক রায়হান। এ আসনে ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এলাকায় ত্যাগী ও দুঃসময়ের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে তিনি পরিচিত।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, শাহরিয়ার আলম দীর্ঘ সময় মন্ত্রী ও এমপি রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের তিনি মূল্যায়ন করেননি বলে অভিযোগ। এ কারণে দলের একটি বড় অংশের নেতাকর্মীরা শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। এবার শাহরিয়ারের সঙ্গে রায়হানের শক্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আসনটিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য হন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আয়েন উদ্দিন। আয়েন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আসাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। এ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ডা. মনসুর রহমান প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। এ কারণে দারার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।