রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
কিশোর তরুণরা বড় ঝুঁকির মধ্যে
৩১ মে ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, এটা ক্যান্সারের কারণ। এই স্লোগান বহুলভাবে প্রচারিত হলেও দীর্ঘ সময়েও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে কতটুকু সচেতনতা বেড়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এ বছরের প্রাতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করি।’
নীতিনির্ধারক মহলে সমস্যাটি সহজেই বোধগম্য- তারপরও সমস্যা ধরে প্রতি বছর নতুন নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে- কিন্তু সমস্যা একই বৃত্তেই অবস্থান করছে। সমস্যাটা শুধু সিগারেট নয়, তামাকজাত নানা দ্রব্য আজ গোটা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য থেকে দেখা যায় নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি ধূমপানের শিকার। ১৩৩ টি দেশের ১৯.৩৩ % যুব এখন তামাকের নেশায় আচ্ছন্ন। এদের মধ্যে ২৩.৩৭% পুরুষ এবং ১৫.৩৫% নারী।
দেখা গিয়েছে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বহু দেশে নিষিদ্ধ হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে না। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। তামাক ব্যবসায়ীরা তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিশানা করেছে। এই কাজে সামাজিক মাধ্যমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশের কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ধুমপানের আধিক্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সমস্যাকে সরাসরিভাবে উৎপাটনের কৌশলের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তামাক নির্মূলে একটি রোডম্যাপ তৈরিতে সরকার উদ্যোগ নিলেও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব।
সংশোধিত আইনের প্রস্তাবে পাতার বিড়ি, ই-সিগারেট নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে৷ এই আইন পাস হলে যে কোনো তামাকজাত পণ্য বিক্রির জন্য প্রয়োজন হবে লাইসেন্স৷ ভ্রাম্যমাণ দোকানে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খেলাধুলার স্থান ও শিশু পার্কের সীমানার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ হবে৷ পান-মশলার মতো পণ্যের সাথে তামাকের ব্যবহার থাকবে না৷ তামাকপণ্য খুচরা বিক্রি করা যাবে না৷এ ধরনের উদ্যেগের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি উপরুব্ধ হচ্ছে।
ধূমপান ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রের সাংঘাতিক ক্ষতি করতে পারে। তরুণ ধূমপায়ীরা শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং অতিরিক্ত শ্লেষ্মার সমস্যায় ভুগতে পারে। যারা কৈশোর বয়স থেকে ধূমপান শুরু করে তাদের ফুসফুসের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং ক্ষমতা হ্রাস করে। ধূমপান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এর ফলে তরুণ ধূমপায়ীরা ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের শিকার হতে পারে।
তামাক নির্মূলে রোডম্যাপ তৈরির সরকারের উদ্যোগ এখনোা চূড়ান্ত হচ্ছে না কেন? আমরা যখন বুঝতে পারছি যে, ধুমপানে শিশু ও তরুণরা অধিক ঝুঁকির মধ্যে আছে, সে ক্ষেত্রে পদক্ষেপটা জরুরিভাবেই নেয়া সমীচীন। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও সবল রাখতে ধুমপান ও তামাক পণ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানই প্রত্যাশিত। সহনশীল আচরণ দিয়ে সমস্যার সমাধান যে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।