বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীতে ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে তারা এ ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। প্রধানত কৌতূহল থেকে হলেও বেশিরভাগই পরিচিত বড় ভাই কিংবা বন্ধুদের প্ররোচণায় ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছে। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। বেশিরভাগই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৪ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের মধ্যে কৌতূহল বেশি কাজ করে। এই বয়সের শিশুদের মধ্যে দ্রুত নতুন নতুন চিন্তা কাজ করে। এরা খুব সহজে প্রভাবিত হয়। শিশু ধূমপায়ীদের বেশিরভাগই পরিচিত বড়ভাই কিংবা বন্ধুদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ধূমপানে জড়িয়ে পড়ে। তাই এরা কাদের সঙ্গে মিশছে, ঘোরাফিরা করছে, শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিত থাকছে কি না তা অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। এর সাথে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় রাখতেও পরামর্শ দেন মনোবিজ্ঞানীরা। তারা বলেন, শিশুদের সঙ্গে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। অহেতুক বকাঝকা কিংবা গালমন্দ করা যাবে না। তাদের যুক্তিপূর্ণ কথাকেও মূল্যায়ন করতে হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ধূমপানে আসক্ত শিশুরা স্কুল পড়–য়ারা নদীর ধারে, কোনো টং চায়ের দোকানে, রেললাইনের ধারে, নিউমার্কেটের ছাদের ওপর, রিকশার হুড তুলে দিয়ে, পাড়ার অলিগলিতে সুযোগ বুঝে ধূমপান করে। অনেকেই সোনাদিঘির মোড়ের মার্কেটের ওপরে উঠেও ধূমপান করে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-প্রাইভেট ফাঁকি দিয়েও ইউনিফর্ম পড়ে নদীর ধারের বিনোদন কেন্দ্রে গিয়েও ধূমপান করে। এছাড়া চিড়িয়াখানা জাতীয় উদ্যানেও শিক্ষার্থীদের ধূমপান করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে নগরের উপকণ্ঠে গ্রামীণ এলাকার খোলা জায়গাকেও বেছে নেয় ধূমপানে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, তারা স্কুলচলাকালীন স্কুল ফাঁকি দিয়ে পদ্মা গার্ডেন কিংবা সিমলা পার্কে নয়তো কোনো ঘুপসি টাইপের চায়ের স্টলে সব বন্ধুরা একত্রিত হয়ে ধূমপান করে। তারা বলেছে, ধূমপান করা কোনো ব্যাপার না, চাইলে যেকোনো জায়গায় ধূমপান করা যায়। শুধু বাসায় করা যায় না। বাবা-মা বুঝে যায়।
কেন ধূমপান করো জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এইতো সব বন্ধুরা একসঙ্গে থাকি। আড্ডা দিই। তখন মনে হয়, ধূমপান করি। এছাড়া আর কী করব ? কিছু তো করার নেই। কারো কারো কাছে মোবাইল আছে, তখন মোবাইলে গেমও খেলা হয়। কীভাবে ধূমপান শিখেছ জিজ্ঞেস করলে একজন জানায়, আমার এক বন্ধু খেত। ওই বন্ধু আবার তার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে খাওয়া শিখেছে। ওই বন্ধুর মাধ্যমে শুরু করেছি। ওই বন্ধু বলতো, খেয়ে দেখ, মজা পাবি।’ অল্প অল্প করে খেতে, এখন পুরোদমে শিখে গেছি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা শুধু সিগারেটই নয়, মাদকসেবনেও জড়িয়ে পড়ছে। এই জড়িয়ে পড়ার পেছনে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করছে। এর মধ্যে একটি বড় ফ্যাক্ট হচ্ছে কৌতূহল ও সহজপ্রাপ্যতা। এছাড়া রয়েছে পারিবারিক শিক্ষা, পারিবারিক পরিবেশ ও মিডিয়ার প্রভাব। এইসব কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই উপায় সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।