নওগাঁয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পৌনে চার কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ৯:৪০ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁর ধামইরহাটের জগদল আদিবাসী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস আলমের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর বাহিরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ছয় জনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন। এ ঘটনায় তফিকুল ইসলামসহ স্থানীয়রা মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দূর্ণীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস আলম দীর্ঘ দিন ধরে সভাপতি মো. দেলদার হোসেন, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মো. ছাইদুল ইসলাম, অফিস সহকারী মো. আব্দুর রউফ তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় নিয়োগে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুসারে ৫ জন কর্মচারীর প্রাপ্ততা থাকলেও জনবল কাঠামোর তোয়াক্কা না করে মাধ্যমিক ও কলেজ শাখাকে সতন্ত্র হিসেবে দেখিয়ে অতিরিক্ত আরও ৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি এক যুগের অধিক সময় ধরে ওই একজন ব্যাক্তিকেই সভাপতি হিসাবে রেখে মোট ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য ১ জন করে ল্যাব সহকারী প্রাপ্যতা থাকায় ৪ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। যার সবাই অধ্যক্ষের নিকট আত্মীয় এবং তাঁর গ্রামের। কিন্তু সু-কৌশলে স্কুলকে স্বতন্ত্র হিসেবে দেখিয়ে সরকার প্রদত্ত কম্পিউটার ল্যাব না থাকার সত্ত্বেও ওই পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বর্হিভূত।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের মাঠের শোভাবর্ধনকারী মেহগনি, আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য প্রায় ৭০টি গাছ অনুমোদন ছাড়াই বিক্রয় করা হয়। যে সমস্ত গাছের গোড়ালির চিহ্ন এখনও দৃশ্যমান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পূর্ব দিকে প্রায় ৩কি.মি দুরে নিকেশ্বর মৌজায় প্রায় ১একর ভিটামাটির উপরে ১২ শত বনজ গাছের বাগানও বিধি বর্হিভূতভাবে বিক্রয় করা হয়। এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট দ্বীতল বিল্ডিং ভাঙ্গার রড ও ইট টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় না করে বিধিবহির্ভূতভাবে বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারশিকৃত প্রার্থী নিয়োগ নিতে এসে ব্যাপক হেনস্তার শিকার হন।প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য অধ্যক্ষকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছারোয়ার হোসেনের কাছে থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিলেও তাকে এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করেননি। এঘটনায় তিনি উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রভাষক মো. ছারোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১ম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে শুন্য পদ দেখে আবেদন করে মনোবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাই। যোগদান করার পর অধ্যক্ষ আমাকে জানান আমার নিয়োগকৃত বিষয়টির অনুমোদন প্রকৃয়াধীন। নিয়োগের সময় তিনি আমার কাছে থেকে ১লক্ষ টাকা নেন। পরে আবারও তিনি আমার কাছে থেকে ৪০ হাজার টাকা নেন। পরে তিনি আমার কাছে আরও টাকা দাবি করে বলে অন্যরা ৪ লক্ষ টাকা করে দিয়েছে। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি আমাকে জামায়াত/শিবিরের তকমা দেন। এরপরও আমার এমপিও না করায় আমি উচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস আলম বলেন, আমি কাউকে নিয়োগ দিইনি। পূর্বের অধ্যক্ষ তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। তার কছে প্রমাণক হিসাবে এই ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ ও যোগদানের কপি চাইলে তিনি তা দেননি। কিন্তু প্রতিবেদকের হাতে থাকা তথ্যাদিতে দেখা যায় তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে ২০১০ সালে নিয়োগ নিয়েছেন। এরপর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত ২৩টি পদে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ডে গঠন করে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন বলেন, অভিযোগটি আমি এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।