রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ:
নওগাঁর বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত গ্রাম আদালতের বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের সেবা গ্রহিতারা আদালত কিংবা থানা পুলিশ মুখি না হয়ে বাড়ির পাশে থাকা গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করে নিচ্ছেন। গত এক বছরে ঐ ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মাধ্যমে প্রায় ৩৫০টি দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিয়মানুসারে ৫সদস্য বিশিষ্ট মনোনীত সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করে পরিচালনা করা হচ্ছে। আর এতেই জনগণের আস্থায় পরিণত হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতটি। হাতের নাগালে হয়রানী ছাড়াই নিরিবিলি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সকল শ্রেণিপেশার মানুষ
। বিশেষ করে ইউনিয়নের গরীব, অসহায়, পিছিয়ে পড়া ও হতদরিদ্র মানুষের কাছে এই গ্রাম আদালত ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গঠিত গ্রাম আদালত ধীরে ধীরে সবার আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায়।
আরও জানা যায়, বিগত এক বছরে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয় (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গ্রাম আদালত কার্যকর প্রতিষ্ঠা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য এবং আবেদনকারী ও প্রতিবাদীর মনোনীত ব্যক্তিসহ মোট ০৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত পরিচালনা করা হয়। গত এক বছরে ইউনিয়নে দায়েরকৃত ও উচ্চ আদালত থেকে প্রাপ্ত দেওয়ানী ও ফৌজদারী প্রায় ৩৫০টি দাায়েরকৃত মামলা গ্রাম আদলতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির করা হয়েছে।
বিচার প্রার্থী স্থানীয় লোকজন বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়ে অনেক উপকৃত হচ্ছি। একটি বিচারের আশায় প্রশাসনিক আদালত কিংবা থানার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে না। আমরা অনেক খুশি। মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন চক্রের পাল্লায় পড়ে অর্থ অপচয় থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে।
নিজের গ্রামেই বিচার পাওয়া যাচ্ছে। বাড়তি কোনো টাকা পয়সা লাগচে না। যাতায়াতের কোনো সমস্যাতেও পড়তে হচ্ছে না।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোছা: আফেলাতুন নেছা তুর্কি বলেন, প্রথম প্রথম গ্রাম আদালতের বিচারকার্য নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা অনীহা কাজ করত। পরে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ফলে মানুষের সন্দেহ দূর হয়ে গ্রাম আদালতের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
যার ফলে গত এক বছরে পারিবারিক কলহ, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, মারামারি সংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে গ্রাম আদালতে। স্বল্প সময়ে অল্প খরচে সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতের কোন বিকল্প নেই। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার গ্রাম আদালতে বিচার কাজ সম্পাদন করা হয়।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর সহযোগীতায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রামীণ নারী, শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে গ্রাম আদালত মাইলফলক ভ’মিকা রাখছে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অপরাধের কারণ অনুসন্ধান করে এর প্রতিকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেটা জন প্রতিনিধিদের জন্য খুবই শান্তিদায়ক। এই আদালতে বাড়তি কোনো টাকা পয়সা লাগে না। যাতায়াতের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। গ্রামের মানুষ বিচার চেয়ে ন্যায় বিচার পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ বিচারে আমার থাকার সুযোগ হয়। তাই গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র মানুষসহ বিচারপ্রার্থী সকলের জন্য সুষ্ঠ ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেস্টা করি। নিজের ইউনিয়নেই গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্য পরিচালিত হওয়ায় আদালতের প্রতি এলাকার মানুষের আস্থার জায়গা তৈরী হয়েছে। গ্রাম আদালতে প্রতিটি বিচার কাজ সম্পাদন করার সময় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ, ইউপি সদস্য সোহেল রানা সাগর, সাহিন, গোলাম রসুল উজ্জল, খন্দকার আমিন, আব্দুল কুদ্দুস, তরিকুল ইসলাম টারজান এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য রাশেদা, শিউলি আক্তার, রেনুকা ও সচিব আব্দুর রাজ্জাকসহ এলাকার অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। আর এই কারণে প্রতিটি বিচার কাজের প্রতি সেবা গ্রহিতাদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. রবিন শীষ বলেন, গ্রাম্য আদালত অত্যন্ত শক্তিশালী একটি আদালত। সাধারণ মানুষদের মাঝে এই আদালত সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে গ্রাম আদালত ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে। যদি গ্রাম আদালতে সুষ্ঠ বিচার কাজ সম্পাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে আর কিছুদিনের মধ্যে প্রশাসনিক আদালত ও থানা নির্ভরতা অনেকাংশ কমে যাবে। তখন একটি মামলার বিচার পেতে দিনের পর দিন আদালত কিংবা থানা প্রাঙ্গনে কাউকে ঘুরতে হবে না। খুব সহজেই নিজের ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে সুষ্ঠু বিচার পাবেন। আর গ্রাম আদালতকে শতভাগ সফল করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।#