শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না নওগাঁর প্রভাবশালী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোল। এই কর্মকর্তা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে নামে বেনামে শহরে করেছেন অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ।
সাধারণ মানুষদের কাছে কল্লোল ‘কসাই’ নামে পরিচিত। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ একটি কথা বলার সাহস পায়নি। তাই এমন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তরমূলক শাস্তি চায় নওগাঁর ভুক্তভোগীরা।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ইদগাহের জমি খারিজ করতে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন কল্লোল। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমির খাজনা কিংবা খারিজ করতে গেলেও ঘুষ নেন কল্লোল।
কল্লোল এতো প্রভাবশালী এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা যে, কোনো ডিসি কিংবা কোনো উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার সাহস পায়নি। বিশেষ করে নওগাঁর সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমানের প্রশ্রয় আর তৎকালীন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কল্লোল আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সমিতির কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় কল্লোল কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। এমন প্রভাব খাটিয়েই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়েছেন অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। বিভাগীয় কেউ তার বিষয়ে কোনো কথা বললেই তাকে অহেতুক হয়রানি করতেন কল্লোল।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের স্টাফ কোয়ার্টারের বিপরীতে নির্মাণ করা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ‘জাহানারা নিবাস’ নামের বহুতল ভবনই প্রমাণ করে যে কল্লোল অবৈধ ভাবে কত কোটি টাকা কামিয়েছেন। এছাড়া শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় পৈতৃক চারশতক জমির উপর নির্মাণাধীন তিনতলা বহুতল ভবনও রয়েছে।
শহরের দূর্গাপুর গ্রামের দূর্গাপুর মৌজায় এনিমি প্রোপার্টিসহ ১০-১২বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে যে জমিগুলো কল্লোলের বেয়াই সাবেক পৌর কাউন্সিলর মন্টু দেখভাল করছেন। যে জমির প্রতি বিঘার আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে নামে ও বেনামে আরো কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া আন্দোলনের পর নওগাঁর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবর কল্লোলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তাকে গত ২০আগস্ট সদর উপজেলা থেকে মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়।
একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব এমন প্রশ্নই এখন পুরো নওগাঁ জুড়ে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত-লাল চানের প্রতিবন্ধী ছেলে সবজি বিক্রেতা ফজলুর রহমান বলেন, কল্লোল যখন ফতেপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ছিলেন তখন আমার সাড়ে তিন কাঠা জমি খারিজ করতে কল্লোল সাত হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। শুধু প্রতিবন্ধীই নয়, জমি সংক্রান্ত কোনো কাজই ঘুষ ছাড়া করতেন না কল্লোল।
ঘুষ দিলেই কল্লোলের কাছে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়, আবার জীবিত ব্যক্তি মৃত হয়। আমার মতো ভুক্তভোগীর অভাব নেই। আমরা স্বৈরাচার কল্লোলের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
নওগাঁর জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. কায়েস উদ্দিন বলেন শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। এই বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কল্লোলকে জানালে তারা সার্ভে করে জানতে পারেন যে জায়গাটি সরকারি।
পরবর্তিকালে কল্লোলকে ম্যানেজ করে সরকারি জায়গাটি ওই দখলকারী ব্যক্তি অন্য মানুষের কাছে কয়েক লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তারা আমার বাড়িতে এসে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করে।
কল্লোলের অবৈধ আয়ের প্রধান উৎসই হলো প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি জায়গা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি নামে নামজারি করে দেয়া। এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কঠোর ও দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
সম্প্রতি বদলি হওয়া জেলার মহাদেবপুরের রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মৌদুদুর রহমান কল্লোল বলেন, ফোকাস্টিং মার্কা নিউজ প্রকাশ করলে খবর আছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলবেন না। আর বৈরিতা সৃষ্টি না করে তিনি একটি সমাধানে আসার অনুরোধ জানান সাংবাদিকদের।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোহেল রানা মোবাইল ফোনে জানান, মৌদুদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।