শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বস্তায় আদা চাষ। পতিত জায়গায় দামী এই ফসলটি বস্তায় চাষ করে লাভজনক হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন বস্তায় আদা চাষের দিকে। এতে করে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে সহজেই অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন চাষীরা। অপরদিকে এমন দামী ফসল চাষ করতে জেলার আগ্রহী চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে নওগাঁয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দামী মসলা জাতীয় ফসল আদা পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে বস্তায় চাষ শুরু হয়েছে। তবে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে পত্নীতলা, পোরশা, সাপাহার, ধামইরহাট, মান্দা, বদলগাছী, রাণীনগর উপজেলায় পরিমাণটি বেশি।
চলতি মৌসুমে নওগাঁয় প্রায় ২২হাজার কৃষকের মাধ্যমে ৩লাখ ৮৩হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২শত ৮৩মেট্রিক টন। প্রতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে বস্তায় আদা লাগানো হয় আর ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে আদা তোলার উপযোগি হয়ে ওঠে। প্রতি বস্তা থেকে প্রায় ১কেজি করে আদার ফলন পাওয়া সম্ভব।
জেলার রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার সৌখিন কৃষক জামিল হোসেন তার পতিত জমিতে ১৪শত বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি বস্তায় সারি সারি আদার গাছ শোভা পাচ্ছে। কম খরচে এমন লাভজনক ফসলের চাষ দেখতে প্রতিদিনই জামিলের বাগানে ভীড় করছেন আগ্রহী চাষীরা।
প্রতি বস্তায় আদা লাগানো থেকে শুরু করে আদা তোলা পর্যন্ত আনুমানিক ৪০টাকা খরচ হবে। ১৪শত বস্তা থেকে প্রায় ৩লাখ টাকার আদা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করছেন কৃষক জামিল। পতিত জমি ফেলে না রেখে কিংবা বাড়ির ছাদেও বস্তায় এই দামী মসলা জাতীয় ফসলটি চাষ করা সম্ভব। আগামীতে তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে আরো বড় পরিসরে বস্তায় আদা চাষ করবেন বলেও জানা জামিল।
উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার আরেক চাষী জানান শুনেছি জামিল ভাই বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আমি সেই আদার চাষ দেখতে এসেছি। বস্তায় আদার গাছ শোভা পাচ্ছে। দেখতে খুবই ভালো লাগছে। বস্তায় আদা চাষ নাকি খুবই লাভজনক। তাই আমিও আগামীতে পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করবো।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন বস্তায় আদা চাষ খুবই সহজলভ্য একটি পদ্ধতি। আদার গাছে রোগের আক্রমণ খুবই কম। এছাড়া সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না বললেই চলে। তাই দিন দিন বস্তায় আদা চাষ জনিপ্রয় হয়ে উঠছে।
শুধু বাগানেই নয় যে কেউ বাড়ির ছাদে কিংবা যে কোন ছায়াযুক্ত পতিত জায়গায় খুব সহজেই বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হতে পারেন। বাণিজ্যিক ভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু হলে বাজারে অবশ্যই আদার আমদানী যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি ভাবে দামও অনেক কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন মসলা জাতীয় ফসল চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার আগ্রহী কৃষকদের বস্তাসহ পতিত জমিতে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। খুব সহজেই একজন মানুষ অল্প পতিত জায়গাতেও কয়েকটি বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন।
এতে করে উৎপাদিত ওই আদা দিয়ে ওই ব্যক্তি নিজেদের চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করতে পারবেন। দিন দিন বস্তায় আদা চাষ অনেক লাভজনক হওয়ায় জেলার প্রতিটি এলাকায় বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বস্তায় আদা চাষ করা প্রতিটি চাষীসহ আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।